সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী চতুর্থ দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়েছেন ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। এর ফলে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে শাহবাগ এলাকা। অন্যদিকে কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েকজন আহত হয়েছে।
এর আগে ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগে আসেন। শিক্ষার্থীরা আসার আগেই পুলিশ শাহবাগে ব্যারিকেড দিয়ে রাখে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে সেখানে অবস্থান নেন।
তার আগে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা কলাভবন, ভিসি চত্বর হয়ে শাহবাগে আসেন।
শিক্ষার্থীরা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন আজকের কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত হবে। অন্যান্য দিন যেমন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবরোধ করা হয়, আজ শুধু শাহবাগ মোড়েই তারা অবস্থান নেবেন। শিক্ষার্থীরা শাহবাগের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে পড়েন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড ভেঙে সড়কে চলে আসেন। পুলিশ সদস্যদের শিক্ষার্থীদের নিবৃত করার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ আছে।
এর আগে একই দাবিতে বিকেল সোয়া ৩টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সমাবেশ করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এ সময় শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ অন্তত ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে চার সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামের টাইগার পাস মোড়েও পুলিশের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে। তারা দাবি করেন, কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অরবোধ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা নবম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করা করে। এতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ জেলা কোটা বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়।
পরে ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে। ওই রিটের শুনানি শেষে গত ৫ জুন সরকারের জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। এতে সরকারি চাকরিতে আবারও কোটা ফিরে আসে।
বিষয়টি আপিলে গেলে গত ৯ জুন হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে বিষয়টি আপিল বিভাগের বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। ৪ জুলাই আপিল বেঞ্চ জানায়, হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর মামলাটির শুনানি শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ের ওপর এক মাসের স্থগিতাদেশ দেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানায়, ঝুলন্ত কোনো সিদ্ধান্ত তারা মানবে না। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকেলে আবারও ‘ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।