মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের ভানুগাছ সড়কে পাশাপাশি অবস্থিত পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এ তিনটি বড় জ্বালানি তেলের ডিপোর অবস্থান। দীর্ঘদিন ধরে শ্রীমঙ্গল রেলস্টেশন থেকে এসব ডিপোর জ্বালানি তেল পরিবহনকারী ওয়াগন থেকে শত শত লিটার জ্বালানি তেল চুরি হয়ে যাচ্ছে।
প্রকাশ্যে এমন চুরির ঘটনা ঘটলেও নীরব রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা তেলের ডিপো হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলায় জ্বালানি তেলের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান মূলত চট্টগ্রাম থেকে জ্বালানি তেল পরিবহন করে থাকে।
স্থানীয়রা জানান, রেলওয়ের তেল চুরির কারবার চলে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা ডিপো থেকে আনা ওয়াগন থেকে। রেলওয়ের তেল চোর সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ সিন্ডিকেট সব পক্ষকে ম্যানেজ করে তেল চুরি চালিয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, চোর চক্রের সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাসিক চুক্তি নিয়ে রেলওয়ে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যার কারণে রেল থেকে শত শত লিটার তেল চুরি হচ্ছে। এসব তেল ট্রেন থেকে নামিয়ে চোরাই পথে বিক্রি করছে তারা। ফলে রেলওয়েকে প্রতি বছর লোকসান দিতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
জানা গেছে, চোর চক্রের প্রধান মো.জাহাঙ্গীর। তিনি ও তার সহযোগীরা ওয়াগনগুলো থেকে প্রতিদিন তেল চুরি করে নিয়ে যায়। রেলওয়ে ওসিকে প্রত্যেক মাসে ৫/৬ হাজার টাকা দিতে হয় তার। মাসিক টাকা না দিতে পারলে তখন চোর চক্রের সদস্যদের ধরে নিয়ে টাকা আদায় করে রেলওয়ে থানার ওসি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তেল চুরির সঙ্গে জড়িত বলেন, রেলওয়ে থানার ওসিকে টাকা দিয়ে তেল নামাই। বিক্রির একটা অংশ রেলওয়ে থানার ওসি ও নিরাপত্তা বাহিনীকে দিতে হয়। লেখালেখি করে লাভ হবে না। আমাদের পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে।
শ্রীমঙ্গলে পদ্মা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ডিপোর দায়িত্বে থাকা সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, রেলের তেল চুরির ব্যাপারে কোনো তথ্য পাইনি। ধারণা করছি, ওয়াগন খালি করার পর ২/৫ লিটার মতো যে তেল জমে সেগুলো নিতে পারে তারা। তবে নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারছি না। তেল চুরির ব্যাপারে আমার কাছে সঠিক কোনো তথ্য নেই।
শ্রীমঙ্গল যমুনা পেট্রোলিয়াম ডিপোর ইনচার্জ বেলায়েত হোসেন খান বলেন, এটা তো ভাই আমাদের দেখার বিষয় না। এটা রেলওয়ের থানার বিষয়। তারা পাহারা দেয়। আমরা তেল ঠিকমতো নিয়ে রেখে দেই। তারপর তেলটা ঘামে। এরপর যদি চুরি হয় এটা তো কিছু করার নেই।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে মাস্টার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমার স্টেশনে তেল চুরি হয়নি। তেল আসলে আমার বুঝিয়ে দিয়ে দেই। তেলের গাড়ি আসলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে বুঝিয়ে দিয়ে দেই। আর খালি গাড়ি বের করে নিয়ে যায়।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার ওসি শ ম কামাল হোসেইন কালবেলাকে বলেন, রেলেওয়ের তেল চুরির ব্যাপারে ইদানীং কোনো সংবাদ পাইনি। এটা অনেক আগে ছিল। মাঝখানে তো বন্ধও ছিল। এ রকম কোনো ঘটনা সত্য না। লেনদেনের বিষয় সঠিক নয়, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। জাহাঙ্গীর ও তার সহযোগীরা বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তেল চোর সিন্ডিকেট সদ্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।