ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা সম্প্রতি চীন সফর করেছেন। এ সফরে গভীর ও ঘনীভূত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এখন জানা যাচ্ছে, আসলে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় চীনের মধ্যস্থতা চেয়ে আর্জি জানাতেই তিনি চীন সফরে যান। যুদ্ধ ইস্যুতে চীনের দ্বারস্থ হওয়া ইউক্রেনের জন্য এটি প্রথম।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৩-২৪ জুলাই বেইজিংয়ে ছিলেন ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা। তিনি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ ছাড়া অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে কিয়েভে মস্কোর হামলার পর যুদ্ধ বন্ধে সরাসরি চীনের সঙ্গে আলোচনা এটিই প্রথম। যেখানে চীনকে বিশ্বস্ত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চেয়েছে কিয়েভ। কুলেবা মূলত ক্রেমলিনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার অনুকূল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছেন। তার সাম্প্রতিক উদ্যোগ যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের প্রস্তুতি ইঙ্গিত দেয়।
কুলেবা জানান, আলোচনায় বসতে ইউক্রেনের আপত্তি নেই। তবে রাশিয়ার আন্তরিকতার অভাব আছে। তিনি প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ বন্ধের শর্তের প্রতি ইঙ্গিত করেন। যদিও অনেক ইউক্রেনীয় রাশিয়ার শর্ত মেনেও যুদ্ধবিরতির জন্য জেলেনস্কির প্রতি চাপ সৃষ্টি করছেন।
ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় পুতিনের শর্তের মধ্যে রয়েছে, রুশ সেনারা ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চলের আংশিক দখল নিয়েছে, কিয়েভকে সেগুলোর দাবি ছেড়ে দিতে হবে। ইউক্রেন কখনো পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। দেশটির সামরিক শক্তিও কমাতে হবে। কিন্তু বিষয়টিকে সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষার প্রশ্ন হিসেবে দেখছে ইউক্রেন।
এদিকে কুলেবার প্রস্তাবে চীনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো সাড়া মেলেনি। চীন অনেকটা রাশিয়ার সুরেই কথা বলেছে। একটি সূত্র বলছে, যুদ্ধ বন্ধের জন্য মস্কো-কিয়েভ সরাসরি আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা শুরু করার সব শর্ত এখনো পূরণ হয়নি। আলোচনার সময় এখনো আসেনি বলেও মন্তব্য করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তারাও যুদ্ধ নয় বরং শান্তিতে বিশ্বাসী বলে কুলেবাকে আশ্বস্ত করেন।
উল্লেখ্য, পশ্চিমা সহায়তায় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনও নানামুখী চাপে আছে। এমনকি সহায়তা তহবিল বন্ধ বা কমানোরও শঙ্কাও দেখা গেছে।
সম্প্রতি ইউরোপের অন্যতম পরাশক্তি জার্মানির কাছ থেকে বড় ধাক্কা খেয়েছে ইউক্রেন। দেশটির সরকার বলছে, ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দেবে তারা। ২০২৪ সালে ইউক্রেনকে প্রায় ৮০০ কোটি ইউরো সমপরিমাণ সামরিক সহায়তা দিয়েছিল জার্মানি। তবে আগামী বছর সেই পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে আনবে দেশটি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এমনটাই জানিয়েছে।
আগামী নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। জোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে আগামী নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এমন পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের ভাগ্যে কী ঘটতে পারে, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে এ ধরনের খবর পেল ইউক্রেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি জি-সেভেন দেশগুলো ইউরোপে থাকা রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের সম্পদ জব্দের প্রস্তাব দেয়। সেখান থেকে যে অর্থ আসবে তা ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়া হবে। জার্মানিও জি-সেভেনের অন্তর্ভুক্ত। দেশটির বিশ্বাস, ওই অর্থ থেকেই ইউক্রেনের সামরিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তাই নিজেদের ওপর চাপ কমাচ্ছে জার্মানি।