Home International গাজায় পোলিও মহামারি ঘোষণা, ছড়াতে পারে প্রতিবেশী দেশেও

গাজায় পোলিও মহামারি ঘোষণা, ছড়াতে পারে প্রতিবেশী দেশেও

60
0

গাজায় পোলিও মহামারি ঘোষণা করেছে যুদ্ধে বিধ্বস্ত উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর জন্য ইসরায়েলের ধ্বংসাত্মক সামরিক আক্রমণকে দায়ী করেছে তারা। খবর আলজাজিরার।

সোমবার (২৯ জুলাই) টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, গাজার পোলিও পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহের দিকে যাচ্ছে। যা প্রতিবেশী দেশগুলোর বাসিন্দাদের জন্যও মারাত্ম স্বাস্থ্য হুমকির কারণ হতে পারে। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা অভিযানের নামে ইসরায়েলের গণহত্যায় জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হয়েছে এটি তার সর্বশেষ লক্ষণ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, এ মহামারি বৈশ্বিক পোলিও নির্মূল কর্মসূচির জন্য বড় বাধা। এখনই তা থামাতে অবিলম্বে ইসরায়েলের ওপর বিশ্ব শক্তিকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। যুদ্ধ বন্ধ করে মানবিক যে সংকট তৈরি হয়েছে তা সমাধান করতে হবে। এ সময় গাজায় পানীয় জলের তীব্র অভাব, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির সুযোগ না থাকা, ক্ষতিগ্রস্ত পয়ঃনিষ্কাশন নালা এবং লাখ টন বর্জ্য অপসারণে অসহায়ত্বের কথা জানায় মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, পোলিওমাইলাইটিস নামের ভাইরাস যা প্রধানত মল-মুখের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এটি একটি অত্যন্ত সংক্রামক ভাইরাস যা স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করতে পারে এবং পক্ষাঘাত ঘটাতে পারে। ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ৯৯ শতাংশ পোলিও হ্রাস পেয়েছে। গণ টিকা প্রদান, প্রচার এবং বিশ্বব্যাপী তা নির্মূল করার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে। এখন গাজায় তা ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লে ফের বিশ্বে পোলিওয়ের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩৯ হাজার জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে হাজারো মানুষ কাতরাচ্ছেন। তাদের অনেকের ভাগ্যে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবাও জুটছে না। হামলা হচ্ছে হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক সংস্থার চিকিৎসা ক্যাম্পেও।

এ ছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অন্তত ৯ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫৯০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বলছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজার সর্বত্র হামলা করছে। তারা হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী ক্যাম্প, ত্রাণ সহায়তার গুদামসহ কিছুই বাদ রাখছে না। এতে বাসিন্দাদের অন্তত ১১ বারের বেশি এলাকা ছাড়তে হয়েছে। সেখানে বর্তমানে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবাও সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে নতুন করে কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনী বোমাবর্ষণ করছে। তাদের হামলা থেকে কোনো স্থাপনাই নিরাপদ নেই। এমনকি শরণার্থীদের তাঁবুগুলোতেও হামলা হচ্ছে। এ ভয়ানক পরিস্থিতিতে আর কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে পাশের একটি কারাগারে আশ্রয় নিয়েছেন শরণার্থীরা।

অথচ এ কারাগার শত শত ফিলিস্তিনি খুনি ও চোরদের আটক রাখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের কেউ অবশিষ্ট না থাকায় এটি এখন পরিত্যক্ত। বাইরের দেয়ালে হাজারো বুলেটে ছিদ্র ভবনটিতে শেষ ভরসা হিসেবে শরণার্থীরা দলে দলে প্রবেশ করছে।

ইয়াসমিন আল-দারদাসি নামে এক শরণার্থী রয়টার্সকে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের দুর্দশা অবর্ণনাতীত। তিনি ও তার পরিবার অসংখ্য আহত ব্যক্তিদের ফেলে কারাগারটিতে এসেছেন। আহতদের অবস্থা এতই বেগতিক যে তাদের সাহায্য করার চেয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি বোমা হামলা থেকে কোনো মতে প্রাণ বাঁচিয়ে তারা পরিত্যক্ত কারাগারটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে কয়েক দিন তারা একটি গাছের নিচে ছিলেন। বর্তমানে কারাগারের নামাজ কক্ষে তাদের ঠাঁই হয়েছে। তার ভাষ্য, অন্তত সূর্যের প্রখরতা থেকে বাঁচতে পারছি। অন্যরা এ সুযোগটুকুও পাচ্ছে না।

দারদাসির সঙ্গে তার স্বামীও আছেন। তিনি কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যায় শয্যাশায়ী। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, এ মানুষটি শেষ সময়ে লেপ-তোশক ছাড়াই মেঝেতে থাকছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here