স্ত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও ছাত্রদের সঙ্গে ২০ জুলাই সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন রিকশাচালক মঞ্জুরুল ইসলাম। বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে খাবার খেতে বসেন তিনি। এ সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও বোমা বর্ষণ হতে থাকলে খাবার শেষ না করেই ফের যেতে চান মঞ্জুরুল।
স্ত্রী আবারও বাধা দেন। এবারও স্ত্রীর বাধা উপেক্ষা করে বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি। এর ১০ মিনিট পর স্ত্রীর কাছে খবর আসে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে উন্নত চিকিৎসার অভাবে ওই দিনই মারা যান তিনি।
মঞ্জুরুল ইসলাম রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের জুয়ান গ্রামের এনছের আলীর ছেলে। দুই স্ত্রী মিলে চার সন্তানের জনক ছিলেন তিনি। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর সেই স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়েছে। প্রথম স্ত্রীর পক্ষের দুই সন্তান তাদের মায়ের সঙ্গেই থাকে। জীবিকার তাগিদে দুই বছর ধরে ঢাকার গাজীপুরে বড়বাড়ি জয়বাংলা রোডে দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি।
মঞ্জুরুলের দ্বিতীয় স্ত্রী রাহিমা বেগম বলেন, সেদিন তিনি তার স্বামীকে বাইরে যেতে অনেক নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি শোনেননি। তার স্বামী তাকে বলেছিলেন, আমার সন্তানরাও তো একদিন ওদের মতো ছাত্র হবে। আজকে হাজার হাজার ছাত্রকে তারা মারছে। ওরা আমার সন্তানের মতো। যাই এই বিপদের সময় যদি ওদের একটু সাহায্য করতে পারি। আর আমি যদি মারাও যাই তুমি মনে কিছু রেখো না। মরলে মনে করবে আমি শহীদ হয়েছি। এ কথা বলে তিনি বাইরে যান। তার ১০ মিনিট পর রাহিমা বেগম শোনেন তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
খবর পেয়ে প্রথমে জয়দেবপুর হাসপাতালে যান রাহিমা বেগম। সেখানকার ডাক্তাররা বলেন, মঞ্জুরুলকে ঢাকায় নিয়ে যেতে। সেখান থেকে উত্তরার এক হাসপাতালে গেলেও টাকা না থাকায় তার চিকিৎসা হয়নি। পরে আরেক হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান মঞ্জুরুল।
রাহিমা বেগম আরও বলেন, তার শ্বশুর ও বাবা ভূমিহীন। ঘটনার পর থেকে তিনি তার বাবার বাড়িতেই থাকছেন। বৃদ্ধ বাবা সরকারি বাঁধের রাস্তায় থাকেন। স্বামীর অকাল মৃত্যুতে সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছেন তিনি। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়েও ভীষণ চিন্তিত। তিনি সবার কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।
মঞ্জুরুলের পিতা এনছের আলী বলেন, তার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। মঞ্জুরুল তার প্রথম সন্তান। আন্দোলনে গিয়ে তার ছেলে মারা যায়। তিনি সরকারের কাছে এ ঘটনায় ন্যায়বিচার দাবি করেন।
স্থানীয় ছাওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন বলেন, মঞ্জুরুলের মৃত্যুতে তার স্ত্রী, সন্তানরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাকে যেন শহীদের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং তার পরিবারের দিকে সরকার দৃষ্টি রাখে- এ দাবি জানান তিনি।