গাজায় নতুন করে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েল। এবার তারা আরও আগ্রাসী মনোভাব দেখাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে, গাজার দেইর এল-বালাহ ও খান ইউনিসে প্রাণের অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চায় ইসরায়েল। তবু পালিয়ে বাঁচা ফিলিস্তিনিরা বলছেন, এ জীবনের চেয়ে মৃত্যুই ভালো ছিল।
গত জুলাই থেকে হামাস নিধনের নামে ইসরায়েল নতুন করে ওই দুই এলাকায় সামরিক অভিযান শুরু করে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাহিনীর দাবি, শরণার্থীদের আশ্রয় নেওয়ার আড়ালে হামাস ওই সব এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে। এখনই তাদের নির্মূল না করলে ইসরায়েলের ভূখণ্ড আবারও হুমকির মুখে পড়বে।
এ অজুহাতে শরণার্থীদের সরে যাওয়ার সুযোগ না দিয়েই হামলা শুরু করে। মুহুর্মুহু আক্রমণের মধ্যেই দায় এড়াতে দেইর এল-বালাহ ও খান ইউনিস থেকে বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়।
শহর দুটি আগেই ধ্বংস করেছে ইসরায়েল। মাঝে রাফাসহ গাজার অন্যান্য অঞ্চলে হামলা শুরু করলে সেখান থেকে মানুষ আবার শহর দুটিতে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে এখান আশ্রিতরা বলছেন, এত বার পালানোর চেয়ে মৃত্যু আরও ভালো ছিল।
আলজাজিরার বৃহস্পতিবারের (২২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি বাহিনী দেইর এল-বালাহ ও খান ইউনিসে নতুন উচ্ছেদের আদেশ জারি করার পরে হাজারো ফিলিস্তিনি আবার সরে যাচ্ছে। খান ইউনিসের আলজাজিরার প্রতিনিধি সাধারণ মানুষের পালানোর নির্মম দৃশ্য দেখেছে। আলজাজিরা পলায়নরত অসহায়দের সঙ্গে কথা বলেছে।
এর মধ্যে এক শরণার্থী বলেন, এ দেশে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যু বেশি কাঙ্ক্ষিত। আমরা ২০ বার বাস্তুচ্যুত হয়েছিলাম। আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমাদের ঘরবাড়ি ও তাঁবুতে ইসরায়েলিরা আঘাত হেনেছে। তারা চায় না যে, আমরা বাঁচি। আমরা জীবন উপভোগ করি তাও তারা চায় না।
তিনি আরও বলেন, মানুষ মারা যাচ্ছে এবং আহত হচ্ছে। মানুষ জানে না কোথায় যাবে, এমনকি আল-মাওয়াসিও নিরাপদ নয়। আমরা জানি না কোথায় যাব, সমুদ্রে বা কোথায়?
আরেকজন বলেন, মানবাধিকার কোথায়? মানুষ কোথায়? কোথায় পৃথিবী? আমরা কি শুধু নামের আরব? আরবরা কোথায়? যুক্তরাষ্ট্র ও সারা বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে। কারণ, আমরা আরব। আমরা মরতে চাই।
তথ্য বলছে, এবারের হামলায় জাতিসংঘের স্কুলগুলোও রক্ষা পাচ্ছে না। এসব স্কুলে শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছেন। এক হিসাবে, বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীর আশ্রয় নেওয়া স্কুলগুলোতে ৪ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ২০টিরও বেশি হামলা হয়েছে। এতে প্রায় ৩০০ জন নিহত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গাজায় স্কুলে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে বেলজিয়াম। দেশটি এ ধরনের হামলা সমর্থন করে না এবং তা বন্ধ চায় বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে এক এক্স-বার্তায় এমনটিই বলেছে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
আলজাজিরার বৃহস্পতিবারের (২২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স-এ একটি বার্তা পোস্ট করেছে। তাতে বলেছে, গাজায় স্কুলে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার নিন্দা জানায় তারা।
বেলজিয়াম বলছে, বেসামরিকদের বিরুদ্ধে হামলা বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অবশ্যই পালন করতে হবে। যুদ্ধবিরতির জন্য আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি।