ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্য যেন প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো অন্যায়, অনিয়ম বা বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীরা অধিকার আদায়ের দাবিতে সেখানে বারবার জড়ো হন। এবার সেই ভাস্কর্যের সামনে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন এক তরুণ। তার চোখ বাঁধা জাতীয় পতাকা দিয়ে, আর হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা: “কেন কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা কিংবা উত্তরাঞ্চল বন্যায় ডুবে গেলে বাংলাদেশ অন্ধ হয়ে যাও?”
এই ছবিটি দ্রুতই ফেসবুকে ভাইরাল হয়, যেখানে অনেক নেটিজেন তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন। তারা প্রশ্ন তুলছেন কেন সাম্প্রতিক কুমিল্লা ও ফেনী অঞ্চলের বন্যায় যেমন উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল, উত্তরাঞ্চলের বন্যায় তেমনটি হয়নি।
একই ধরনের ক্ষোভ প্রকাশ করে গাইবান্ধার বাসিন্দা একে প্রামাণিক পার্থ ফেসবুকে প্রশ্ন তোলেন, “উত্তরবঙ্গ কি সতীনের সন্তান?” তার পোস্টে বিভিন্ন নেটিজেন মন্তব্য করেন। সুজন রয় নামের একজন লেখেন, “শিল্পপতি, কোটিপতি, রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক উত্তরবঙ্গে নেই? নাকি এটা বাংলাদেশের অংশ নয়? এত বৈষম্য কেন?” রতন রয় আরও সংযোজন করেন, “সিলেট বা ফেনী হলে বিকাশে টাকা উঠানো হতো, ত্রাণের জন্যও টাকা জমা থাকতো ব্যাংকে। মানুষের আবেগ আর চোখের জল থামত না।”
কোটা আন্দোলনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ ফেসবুকে এক পোস্টে রংপুর বিভাগকে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, “আমরা কি রংপুর বিভাগকে আদর করে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ ডাকব?” তার পোস্টে এক মন্তব্যকারী মোজাম্মেল হৃদয় বলেন, “আর কুড়িগ্রাম তার রাজধানী!” রিফাত আল জোহা নামের একজন লিখেন, “দেশের এই অংশে বন্যা হলে মানবতা যেন শুধু দক্ষিণমুখী হয়ে না থাকে, প্রিয় ভাই…”
এদিকে, উত্তরবঙ্গে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করার কথা জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. আবু বাকের মজুমদার। রবিবার এক ফেসবুক পোস্টে তিনি জানান, “অতি ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে উত্তরবঙ্গে বন্যা দেখা দিয়েছে। পূর্বে উত্তোলিত নগদ অর্থ দিয়ে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। আপনাদের সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।”
এদিকে, বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে আবারও মাঝারি ধরনের বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, উজানের বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাটে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বাড়ছে।
প্রতিবছর উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের বন্যা দেখা যায়। বন্যা প্রতিরোধের নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পুরোপুরি সফল হয়নি, যার ফলে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে।