সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান নেসলের শিশুখাদ্যে মাত্রাতিরিক্ত চিনির বিষয়টি পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জাকারিয়া গণমাধ্যমের বলেন, শিশুখাদ্যে চিনি মেশানোর বিষয়টি নেসলে তাদের পণ্যে উল্লেখ করে। তবে, দেশের মান অনুযায়ী কতটুকু চিনি মেশানো সহনীয় বা মান বজায় রাখা হচ্ছে কিনা, তা পর্যালোচনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, নেসলের এসব খাদ্যপণ্য বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। শিশুদের শরীর জন্য ক্ষতিকর- এমন প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে, সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা পাবলিক আই ও ইন্টারন্যাশনাল বেবি ফুড অ্যাকশন নেটওয়ার্কের করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিক্রি করা নেসলের শিশুখাদ্যে উচ্চমাত্রায় চিনির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অথচ একই পণ্য যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড এবং অন্যান্য উন্নত দেশে বিক্রি করা শিশুখাদ্যে কোনো ধরনের অতিরিক্ত চিনি যুক্ত করা হয়নি।
পাবলিক আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, নেসলে সুইজারল্যান্ডে বাজারজাত করা তাদের পণ্য সেরেলাকে বাড়তি চিনি ব্যবহার না করলেও বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে বাড়তি চিনি যুক্ত করছে।
একই অবস্থা নিডোর। বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, সেনেগাল এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতেও নিডো খুব জনপ্রিয়। এসব দেশেও এক থেকে তিন বছর বয়সী ছোট বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা নেসলের সব পণ্যে বাড়তি চিনি রয়েছে। যা স্থূলতা এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক নীতিমালার লঙ্ঘন।
শুধু তাই নয়, বর্তমানে বাংলাদেশের বাজারে নেসলের ৯টি খাদ্যপণ্য বিক্রি হচ্ছে। সবগুলো পণ্যতেই বাড়তি চিনি রয়েছে। অতিরিক্ত পরিমাণ চিনি ও মধু মেশানো থাকা খাবার শিশুরা খেয়ে বিভিন্ন রোগের শিকার হতে পারে।
এদিকে, শিশুখাদ্যে অতিরিক্ত চিনি ব্যবহারের অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়েছে নেসলে কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, আমরা আশ্বস্ত করতে চাই যে আমাদের শিশু খাদ্যশস্য পণ্যগুলো প্রাথমিক শৈশবকালের জন্য প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, আয়রন ইত্যাদি পুষ্টির প্রয়োজনীয়তার যথাযথ সরবরাহ নিশ্চিত করতে তৈরি করা হয়। আমরা কখনই পণ্যের পুষ্টির মানের সঙ্গে আপস করি না এবং কখনই করবো না। বিস্তৃত গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ককে আমাদের পণ্যের পুষ্টির প্রোফাইল বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করি।
ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়, নেসলে বাংলাদেশের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য হলো, আমরা পুষ্টিগুণের সঙ্গে কখনই আপস করবো না। আমরা এটাও নিশ্চিত করি যে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যগুলো CODEX মান (WHO এবং FAO দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি কমিশন) এবং শর্করাসহ সব পুষ্টির প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সম্পর্কিত স্থানীয় স্পেসিফিকেশন (প্রয়োজন অনুসারে) সম্পূর্ণ এবং কঠোরভাবে মেনে চলছে।
চিনি থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে নেসলে বলছে, গত পাঁচ বছরে বৈকল্পিকের ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই ৪০ শতাংশ পর্যন্ত চিনির ব্যবহার কমিয়েছি। আমরা নিয়মিত পোর্টফলিও পর্যালোচনা করি এবং পুষ্টি, গুণমান, নিরাপত্তা এবং স্বাদের সঙ্গে আপস না করে পণ্যে শর্করার মাত্রা আরও কমাতে পণ্যগুলোকে উদ্ভাবন এবং সংস্কার চালিয়ে যাচ্ছি। নেসলে বাংলাদেশ ভোক্তাদের সর্বোত্তম পুষ্টি সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবসময় আমাদের পণ্যে পুষ্টি, গুণমান এবং নিরাপত্তার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখব।