Home Bangladesh ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিয়ে ভয়ংকর তথ্য দিল আবহাওয়া অফিস

ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিয়ে ভয়ংকর তথ্য দিল আবহাওয়া অফিস

138
0

আসন্ন ঘূর্ণিঝড় রেমাল নিয়ে ভয়ংকর তথ্য দিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মো. আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমাল ‘সিভিয়ার সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে। ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার বেগে এটি অতি প্রবল আকার ধারণ করে আঘাত হানতে পারে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে।

শনিবার (২৫ মে) দুপুরে ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আজিজুর রহমান বলেন, সাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও অগ্রসর ও ঘনীভূত হচ্ছে। আজ রাত ৯টায় আরও শক্তি সঞ্চয় করে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। পরের দিন রোববার সকাল নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

এর আগে নিম্নচাপটি দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে উপকূল অঞ্চলে চলে আসতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেছেন, বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে শনিবার রাত থেকেই মহাবিপদ সংকেত দেখানো হতে পারে। এটা ১০ নম্বর মহাবিপদে চলে যেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের কোন সংকেতের কী মানে?
ঝড়ের সময় আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সমুদ্রবন্দরের ক্ষেত্রে ১১টি সংকেত নির্ধারিত আছে। এই সংকেতগুলো সমুদ্রবন্দরের ক্ষেত্রে ভিন্ন বার্তা বহন করে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সংকেতগুলোর বিস্তারিত-

১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত : জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার পর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হতে পারে। দূরবর্তী এলাকায় একটি ঝোড়ো হাওয়ার অঞ্চল রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার। ফলে সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টি হবে।

২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত : গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথে বিপদে পড়তে পারে।

৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত : বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলোর দুর্যোগকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্দরে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার হতে পারে।

৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত : বন্দর ঘূর্ণিঝড়কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১-৬১ কিলোমিটার। তবে ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো তেমন বিপজ্জনক সময় হয়নি।

৫ নম্বর বিপদসংকেত : বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৬ নম্বর বিপদসংকেত : বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৭ নম্বর বিপদসংকেত : বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। ঝড়টি বন্দরের ওপর বা এর কাছ দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৮ নম্বর মহাবিপদসংকেত : বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়তে পারে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে বাঁ দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।

৯ নম্বর মহাবিপদসংকেত : বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা এর বেশি হতে পারে। প্রচণ্ড ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।

১০ নম্বর মহাবিপদসংকেত : বন্দর প্রচণ্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতার এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে।

১১ নম্বর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত : আবহাওয়ার বিপদসংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় যে দোয়া পড়বেন
ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে বাঁচতে মহান আল্লাহর কাছে আমাদের বেশি বেশি দোয়া করতে হবে। পাশাপাশি দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের ব্যবস্থা ও আশ্রয় নেওয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে। বৃষ্টি আমাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। আবার অনেক সময় বিপদও ডেকে আনে। অতিবৃষ্টি ও বন্যা অবশ্যই আমাদের জন্য কষ্টের। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদিতে মোহাম্মদ (স.) এ দোয়া পড়তে বলেছেন।

‘আল্লাহুম্মা হাওয়া-লাইনা, ওয়ালা আলাইনা; আল্লাহুম্মা আলাল আ-কাম ওয়াজ জিরাব ওয়া বুতুনিল আওদিআ; ওয়া মানাবিতিস শাজার।’ (বুখারি, হাদিস ১০১৪)

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাদের আশপাশে বৃষ্টি দিন, আমাদের ওপরে নয়। হে আল্লাহ! পাহাড়-টিলা, খাল-নালা এবং গাছ-উদ্ভিদ গজানোর স্থানগুলোতে বৃষ্টি দিন।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিপর্যয় ও প্রতিকূল অবস্থায় রাসুল সা. খুব বিচলিত হয়ে পড়তেন। আল্লাহর শাস্তির ভয় করতেন। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। তবে যদি তোমরা একে তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেখতে পাও, তবে এ দোয়া করবে-

‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরি মা ফিহা ওয়া খাইরি মা উমিরাত বিহি, ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররি হাজিহির রিহি ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উমিরাত বিহি।’ (তিরমিজি, মিশকাত)

অর্থ: হে আল্লাহ! আমরা তোমার নিকট এ বাতাসের ভালো দিক, এতে যে কল্যাণ রয়েছে তা এবং যে উদ্দেশ্যে তা নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার উত্তম দিকটি প্রার্থনা করছি। তোমার নিকট এর খারাপ দিক হতে, এতে যে অকল্যাণ রয়েছে তা হতে এবং এটা যে উদ্দেশ্যে আদেশপ্রাপ্ত হয়ে এসেছে তার মন্দ দিক হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি যে লোকজন মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়ে থাকে, আর আপনি তা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন? এর জবাবে রাসুল সা. বলেন, আমি এই ভেবে শঙ্কিত হই যে, বৃষ্টি আমার উম্মতের ওপর আজাব হিসেবে পতিত হয় কিনা। কেন না আগের উম্মতদের ওপর এ পদ্ধতিতে (বৃষ্টি বর্ষণের আকারে) আজাব পতিত হয়েছিল। (তিরমিজি ৩৪৪৯, বুখারি ৩২০৬, মুসলিম ৮৯৯)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here