কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের দায়ে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুরে কুমিল্লার বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-১ এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. আলাউদ্দিন বরিশাল সদর উপজেলার কুন্ডলীপাড়া গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, আলাউদ্দিন চৌদ্দগ্রামে কসমেটিকস ব্যবসা করেন। ২০২০ সালের ১৮ জুলাই ওই শিক্ষার্থীকে
আসামির ঘরের ভেতরে কসমেটিক দোকানে কাজল কিনতে যায়। এ সময় তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন আলাউদ্দিন। পরে ভিকটিমকে প্রাণে মেরে ফেলার ভয়ভীতি দেখিয়ে কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেওয়া হয়।
ঘটনার কয়েক মাস পর ভিকটিম অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি চৌদ্দগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে ভিকটিম সাগরিকা ২৪ সপ্তাহ ১ দিনের অন্তঃসত্ত্বা বলে জানান চিকিৎসক।
পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো ঘটনার মূল রহস্য খুলে বলেন। এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে আলাউদ্দিনকে আসামি করে চৌদ্দগ্রাম থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহা. কামাল উদ্দিন আসামিকে গ্রেপ্তার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
২০২৩ সালের ৫ এপ্রিল আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠন করে রাষ্ট্রপক্ষে ৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও শুনানি শেষে আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় দেয়।
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণের কারণে ভিকটিমের গর্ভে যে ছেলে জন্মগ্রহণ করেছে তাকে তার মা কিংবা তার আত্মীয়-স্বজনের তত্ত্বাবধানে রাখা যাবে। সন্তানটি তার বাবা বা মা কিংবা উভয় পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার অধিকারী।
সন্তানের বয়স ২১ বছর না হওয়া পর্যন্ত তার ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। সন্তানের দেখবাল করার এ অর্থ সরকার ধর্ষক আলাউদ্দিনের কাছ থেকে আদায় করতে পারবেন।
আইনের ১৫ ধারা অনুসারে আসামির বিরুদ্ধে আরোপিত অর্থদণ্ডের অর্থকে ধর্ষণের শিকার ভিকটিমের ক্ষতিপূরণ হিসাবে গণ্য করা হয়। দণ্ডিত অর্থ ভিকটিমকে পরিশোধ না করলে একই আইন অনুসারে ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে আসামির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে ওই টাকা ভিকটিমকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পরিশোধ করার জন্য জেলা কালেক্টর, কুমিল্লাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
রায় ঘোষণাকালে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আলাউদ্দিন আদালত কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, আশা করছি উচ্চ আদালত এ রায় বহাল রাখবেন।