বিয়ে ঠিক হলে বর বা কনেকে উভয় দিকের আত্মীয়রা পৃথকভাবে পঞ্চব্যঞ্জনে খাওয়ান। এটা হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়ের আগের অন্যতম এক অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠানের নাম আইবুড়ো ভাত। এই আইবুড়ো ভাত খেতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার ১ নম্বর ব্লকের ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (বিডিও) রজনীশ কুমার যাদব। ঘটনাটি গত বৃহস্পতিবারের।
রজনীশ কুমার যাদবের বিয়ে ঠিক হলে বৃহস্পতিবার এই ১ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মী ও কর্মকর্তারা বিডিওকে আউবুড়ো ভাত খাওয়ান। পশ্চিমবঙ্গের এই ব্লক কর্মকর্তা হলেন বাংলাদেশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদমর্যাদার সমান।
সম্প্রতি রজনীশ কুমার যাদবে বিয়ে ঠিক হয়। তাই তাঁকে বিয়ের আগে পঞ্চায়েত সমিতির কর্মকর্তারা উদ্যোগ নেন আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর। তাতে সায় দেন বিডিও। সেভাবে বিডিও অফিসের একটি কক্ষে তাঁকে আইবুড়ো ভাত খাওয়ান পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। বিডিওর জন্য ১৪ পদের রান্নার আয়োজন করা হয়। সেই সঙ্গে দুই, মিষ্টি, পাঁপড় আর চাটনি তো ছিলই।
বিডিওকে চেয়ার–টেবিলে বসিয়ে এলাহি আয়োজনে আইবুড়ো ভাত খাওয়ানো হয়। প্রথমে তাঁর গলায় রজনীগন্ধার মালা পরানো হয়। কপালে দেওয়া হয় চন্দনের টিপ। তারপর শাঁখ বাজিয়ে ও উলুধ্বনি দিয়ে বরণ করা হয়। খাওয়ানো হয় নানা পদ—আমিষ–নিরামিষ সব ধরনের খাবার। এ অনুষ্ঠানেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েত সমিতির কর্মকর্তা কাকলি দাশগুপ্ত বিডিওকে ফুলচন্দন দিয়ে আশীর্বাদ করেন। বিডিও ওই নেত্রীর পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন।
এই আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়। একটি সরকারি অফিসে কীভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এবং সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে এমন আয়োজনে সায় দিতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী এ ঘটনার পর বলেন, আইবুড়ো খাত খাওয়ানোর অনুষ্ঠানটি হয়েছে বিডিও দপ্তরের মধ্যেই। আর তাতে প্রমাণ হয়ে গেল, সরকার ও তৃণমূলের মধ্যে পার্থক্য নেই।
তবে রজনীশ কুমার যাদব বলেন, ‘আমি অত কিছু বুঝতে পারিনি। আমাকে পঞ্চায়েতের সদস্যরা বিয়ের আগে খাওয়াতে চাইলে রাজি হয়ে যাই। তাঁরা আমার জন্য আইবুড়ো ভাত খাওয়ানোর আয়োজন করেন।’
এ ঘটনার পর পূর্ব বর্ধমানের জেলা প্রশাসক ঘটনার বিষয় জানতে চেয়ে বিডিওকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠির উত্তর পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেবেন জেলা প্রশাসক।