Home Bangladesh আট বছর আগে গুম হওয়া ইসমাইলকে ফিরে পেতে ব্যাকুল পরিবার

আট বছর আগে গুম হওয়া ইসমাইলকে ফিরে পেতে ব্যাকুল পরিবার

65
0

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়ার ৮ বছর পরেও ফিরে আসেননি রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ইসমাইল হোসেন। ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিজের দোকানে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড় থেকে তাকে একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর তিন দিন পর একটি মোবাইল ফোন থেকে ইসমাইল পরিবারকে জানিয়েছিলেন, তিনি একটি বাহিনীর হেফাজতে আছেন। তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে বাহিনীটি জানিয়েছে। কিন্তু আট বছরেও ইসমাইল ফেরেননি।

জুয়েলারি ব্যবসায়ী ইসমাইলের বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ি আলীপুর মহল্লায়। তার বাবার নাম ইসরাইল হক। স্বজনরা এখনো তার ফেরার পথ চেয়ে আছেন। সরকার পতনের পর কথিত ‘আয়নাঘর’ থেকে কয়েকজন বন্দি ফিরে আসার পর স্বজনদের আশা আরও বেড়েছে। ইসমাইলের ছোট ভাই ইউসুফ আলী কয়েকদিন ধরে কথিত আয়নাঘরের সামনে অবস্থান করছেন।

আর বাড়িতে অপেক্ষা করছেন বৃদ্ধ বাবা ইসরাইল হক, বৃদ্ধা মা মোমেনা বেগম ও স্ত্রী নাইস খাতুন। বাবার চেহারা মনে করতে না পারা ৮ বছরের ছেলে সিফাত আর ১৩ বছরের কিশোর রিফাতও আছে বাবার ফেরার অপেক্ষায়। কয়েকদিন ধরে তারা শুধু চোখের পানি ফেলছেন।

পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার আগে দোকানে যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে বের হন ইসমাইল হোসেন। উপজেলা সদর ডাইংপাড়া মোড়ে সাদা পোশাকে থাকা একদল লোক তাকে থামিয়ে নিজেদের গাড়িতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ইসমাইল হোসেন তখন চিৎকার শুরু করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে যান। তারা ওই ব্যক্তিদের চ্যালেঞ্জ করেন। তখন তারা নিজেদের একটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দেন। তারা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ইসমাইলকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যান।

এর তিন দিন পর ১২ সেপ্টেম্বর ইসমাইল হোসেন ০১৮৩৪৩১৩৩৪৮ নম্বরের মোবাইল থেকে ফোন করেন। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে নিয়ে এসেছেন। রাজশাহীর কোথায় কোন অফিসে তিনি অবস্থান করছেন সেটিও তিনি জানিয়েছিলেন। পরে পরিবারের সদস্যরা সেখানে যান। এ সময় বাহিনীটির পক্ষ থেকে ইসমাইলের স্বজনদের জানানো হয়, ইসমাইলকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনও ইসমাইল আসেননি। ইসমাইলকে তুলে নেওয়ার পরদিন গোদাগাড়ী থানায় ছেলে নিখোঁজ বলে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন বাবা ইসরাইল হক। কিন্তু পুলিশও কখনও ইসমাইলকে উদ্ধারে উদ্যোগী হয়নি।

বৃদ্ধ ইসরাইল হক বলেন, ‘আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর সে ফোন করেছিল। সে কোথায় আছে জানিয়েছিল। আমরা সেখানে গেলে জানানো হয়েছিল, তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত ছাড়া হয়নি। সে বেঁচে আছে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে আমরা সেটাও জানি না।’ দুঃখ করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে গুম হওয়া লোকেরা ফিরে আসছে। তাদের আত্মীয়দের মুখে হাসি ফুটছে। আমার ইসমাইল ফিরবে কবে?’ আমি কি জীবনের শেষ সময়টাও ছেলের জন্য কেঁদেই যাব? আমার ইসমাইল কি আর ফিরবে না কখনো?’

ঢাকায় আয়নাঘরের সামনে কয়েকদিন ধরে অবস্থান করছেন ইসমাইল হোসেনের ছোটভাই ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, ‘আট-দশ বছর পর যখন গুম হওয়া অন্যরা ফিরছে, তাহলে আমার ভাইও ফিরে আসবে এই আশায় ঢাকায় এসেছি। আয়নাঘর হয়তো দেশের সব জেলাতেই আছে। কোথায় কোথায় এই আয়নাঘর আছে, সেখানে কারা এখনো গুম হয়ে আছে তা খুঁজে বের করা হোক। আমরা আশায় আছি, আমার ভাইও এসে মায়ের বুকে ফিরে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here