তিন বছর আগে ২০২১ সালের ১৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এ দিন দ্বিতীয়বারের মতো কাবুলের ক্ষমতায় বসে তালেবান। বিশ্বের কোনো দেশ এখনো তালেবানকে বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি না দিলেও আঞ্চলিক বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করেছে তারা।
এমনকি তালেবান প্রতিনিধিরা জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত বিভিন্ন বৈঠকেও অংশ নিয়েছেন।
ক্রাইসিস গ্রুপের দক্ষিণ এশিয়া প্রোগ্রামের কর্মকর্তা ইব্রাহিম বাহিস জানান, তালেবানরা ঐক্যবদ্ধ। তারা একটি গোষ্ঠী হিসেবে শাসন করে, একটি গোষ্ঠী হিসেবে যুদ্ধ করে। প্রশাসনে ঐক্য ও শৃঙ্খলা নিয়ে আসতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের রণক্ষেত্র থেকে ঝানু তালেবান নেতাদের নিয়ে আসা হয়েছে। তাদের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের শীর্ষ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তালেবানের বর্তমান প্রশাসনকে ‘আফগানিস্তানের আধুনিক সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী সরকার’ বলে মনে করেন বাহিস। তার মতে, তালেবান চাইলে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রামপর্যায়ে নিখুঁতভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেক্টোরাল অ্যাসিস্ট্যান্সের লীনা রিকিলা তামাং মনে করেন, তালেবানের দেশ পরিচালনার বৈধতা জনগণের কাছ থেকে পাওয়া নয়।
এদিকে আফগানিস্তানের অর্থনীতি ক্রমশ দুর্বল হয়েছে। ২০২৩ সালেও দেশটির মোট জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ এসেছে বিদেশি সহায়তা থেকে। গত তিন বছরে আফগানিস্তানে অন্তত ৩৮০ লাখ ডলার সহায়তা দিয়েছে জাতিসংঘ। এ সময়ে দেশটিতে এককভাবে সবচেয়ে বেশি সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এসব সহায়তার একটি বড় অংশ অন্য দিকে চলে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তালেবান নারীশিক্ষা প্রায় নিষিদ্ধ করেছে। সব ধরনের চাকরি থেকে নারীদের বরখাস্ত করেছে। এসব কিছুও দেশটির অর্থনীতির জন্য আরেকটি বড় ধাক্কা।
তালেবান সরকারকে এখনো বিশ্বের কোনো দেশ স্বীকৃতি দেয়নি। কিন্তু চীন ও রাশিয়ার মতো দেশটির বড় প্রতিবেশীরা মনে করে, একটি স্থিতিশীল আফগানিস্তান তাদের জন্য মঙ্গলজনক। আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত তালেবানের সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেন করছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে কাতার।
অসংখ্য পাহারাচৌকি, সাঁজোয়া যান ও হাজার হাজার যোদ্ধা নিয়ে তালেবান নিজেদের নিরাপত্তা এক ধরনের নিশ্চিত করেছে। কিন্তু দেশটি নারী ও সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ নয়। আত্মঘাতী বোমা হামলা ও ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলায় দেশটিতে প্রায় সময় হতাহতের ঘটনা ঘটে। গত ২০ বছরে আফগানিস্তানে অনেক গণমাধ্যম তৈরি হয়েছিল। তালেবান আসার পর অধিকাংশ গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে গেছে।