Home Bangladesh ‘ঋণনির্ভর কল্পনার ফানুস’ বাজেট প্রত্যাখ্যান বিএনপির

‘ঋণনির্ভর কল্পনার ফানুস’ বাজেট প্রত্যাখ্যান বিএনপির

133
0

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘শূন্যের ওপর দাঁড়ানো কল্পনার ফানুস’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, কর ও ঋণনির্ভর এই বাজেট লুটেরাবান্ধব। আওয়ামী লীগ নিজেদের চুরি হালাল করার জন্য এই বাজেট প্রস্তাব করেছে। এ বাজেট শুধু গণবিরোধী না, বাংলাদেশবিরোধী।

রোববার (৯ জুন) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত বাজেটের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য কোনো স্বস্তি নেই। বর্তমান লুটেরা সরকারের এ বাজেট কেবল গুটিকয় অলিগার্কের জন্য। যারা শুধু চুরিই করছে না; তারা ব্যবসা করছে, তারাই নীতি প্রণয়ন করছে, আবার তারাই দেশ চালাচ্ছে।

বাজেটকে গণমানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থার সঙ্গে নিষ্ঠুর তামাশা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অসহনীয় মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা জনগণের ওপর করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ৬ শতাংশ। কীভাবে মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা হবে, তার কোনো পথনির্দেশনা নেই। সরকারি আশ্রয়-প্রশ্রয়ে কিছু সিন্ডিকেটের কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। তাদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, বাজেটে সে আলোচনা নেই।

প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘কালো টাকা সাদা করার বাজেট’ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ায় সৎ ও বৈধ করদাতারা নিরুৎসাহিত এবং দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়েছে। দুর্নীতি করার এই লাইসেন্স দেওয়া অবৈধ, অনৈতিক ও অসাংবিধানিক। সরকারের আনুকূল্যে বেড়ে ওঠা আজিজ-বেনজীরদের মতো দুর্নীতিবাজদের কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বাজেটে ঋণ করে ঋণ পরিশোধের ফন্দি করা হয়েছে- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাজেটের এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতি মেটানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ঋণ নিয়ে। সরকার কঠিন শর্তের বৈদেশিক ঋণের দিকে আরও ঝুঁকবে। দেশ আটকা পড়বে আরও গভীর ঋণের ফাঁদে। যার বোঝা চাপবে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। বর্তমানে দেশের প্রতিটি নবজাতক শিশুকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকার ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জন্ম নিতে হয়।

তিনি আরও বলেন, দেশ দেউলিয়াত্বের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। রিজার্ভ ও ডলার সংকট বর্তমান অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সংকট। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার কোনো রূপরেখা বাজেটে নেই। কর্মসংস্থান তৈরির কোনো দিকনির্দেশনাও নেই।

আওয়ামী লীগের ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো উন্নয়নের বেলুন ফুটো হয়ে গেছে এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ বাজেট শুধু গণবিরোধী না, বাংলাদেশবিরোধী। অপ্রয়োজনীয় মেগা প্রকল্প বন্ধ রেখে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষির মতো জনকল্যাণমুখী খাতে ব্যবহার করা যেত। কিন্তু সেটা করলে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে, তাই পুরো বাজেট করা হয়েছে মেগা চুরি ও দুর্নীতির জন্য।

তিনি বলেন, সরকার বাজেটে জনগণের পকেট কাটার দিকেই বেশি মনোযোগ দিয়েছে। যারা কর ফাঁকি দেয়, তাদের কাছ থেকে কর আদায়ের পরিকল্পনা না করে, যারা নিয়মিত কর দেয়, তাদের কাছ থেকে বাড়তি আদায়ে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। এই বাজেট আওয়ামী লীগ ও তাদের মাফিয়া গুরুদের মধ্যে ভাগাভাগির একটি ইজারাপত্র মাত্র।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, বাজেটের দুই-তৃতীয়াংশ যাবে বেতন-ভাতা, প্রণোদনা, ভর্তুকির মতো অনুৎপাদনশীল খাতে। পুলিশ ও প্রশাসনের একমাত্র কাজ বিরোধী দলকে নির্যাতন করার। তাদের খাতেই বেশি খরচ করা হচ্ছে।

বিএনপির আমলে অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান প্রতিটি বাজেটের আগে ভিক্ষার থলি নিয়ে ঘুরতেন- আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এবারের বাজেট দেখেই বোঝা যায় কারা ভিক্ষার থলি নিয়ে ঘুরছে। পুরো বাজেটই ভিক্ষার, তার মধ্যে নিজস্ব কিছুই নেই। ঘাটতি বাজেট মেটানো হবে ঋণ দিয়ে। একদিকে বৈদেশিক ঋণ, আরেক দিকে অভ্যন্তরীণ ঋণ। দেশের মানুষ ইতোমধ্যে খাদে পড়ে গেছে, তাদের ওপর চেপে বসেছে বাজেটের হাতি। তাদের কাছ থেকেই আরও ঋণ নেওয়া হবে।

লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, যে সরকার নিজেরাই আইনকানুন ও সংবিধান লঙ্ঘন করে- তারা কীভাবে আর্থিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কতিপয় অর্থপিপাসু অলিগার্ক ও দুষ্ট রাজনীতিকের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকারি কাজে ব্যয় সংকোচন, ব্যাংকিং খাতে নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা স্থাপন কিংবা আর্থিক খাতের মৌলিক সংস্কার নিয়ে এই বাজেটে কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।

তিনি বলেন, চতুর্দিক থেকে সর্বগ্রাসী দুর্নীতি বাংলাদেশকে কব্জা করে ফেলেছে। দেশ এক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মহাসংকটে নিপতিত। এর মূল কারণ সুশাসনের অভাব ও জবাবদিহিহীন এই মাফিয়া সরকার। এই মহাসংকট থেকে উত্তোরণের একটিই উপায়, তা হচ্ছে- এই মাফিয়া চক্র এবং চেপে বসা মাফিয়া স্বৈরশাসকের কবল থেকে দেশকে রক্ষা করা, তাদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের স্থায়ী অবসান ঘটানো। দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে, দুঃশাসন ও সীমাহীন দুর্নীতি থেকে জনগণকে উদ্ধার করতে হবে। দেশে অবিলম্বে একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে- যেটা একমাত্র সম্ভব একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। ‘আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র’- এই ধাপ্পাবাজির অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রকামী ১৮ কোটি মানুষকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অবাধ ও নিরপেক্ষ সুযোগ সৃষ্টি করতেই হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, যে গণতন্ত্র, সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা ছিনিয়ে এনেছি স্বাধীনতা; যে কোনো মূল্যে সে গণতন্ত্র আমরা ফিরিয়ে আনবই ইনশাআল্লাহ। এ দেশে আবার সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনম্যান্ডেট সমর্থিত জাতীয় সংসদে আবার জনকল্যাণ ও মানবকল্যাণমূলক বাজেট প্রণীত হবে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। বাংলাদেশের জনগণের কাছে এটা বিএনপির দৃঢ় অঙ্গীকার।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here