সিডনির দক্ষিণ-পশ্চিমে ক্যাম্পসি পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা লুনার নিউ ইয়ার বা চন্দ্র নববর্ষের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে একটি প্রাণবন্ত নীল ড্রাগন তৈরিতে ব্যস্ত।
মিজ জুংসু জুং এই স্কুলের কোরিয়ান দ্বিভাষিক শিক্ষক।
তিনি বলছেন, “২০২৪ সালে, কোরিয়া ব্লু ড্রাগনের বছর উদযাপন করবে যা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য মজার হবে।”
শিক্ষার্থীরা ‘গিম্বাপ’ নামক কোরিয়ান রাইস রোল কীভাবে তৈরি করতে হয় তাও শিখছে।
এই স্কুলে, শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র ভাষা সম্পর্কে নয় – সম্পূর্ণ দ্বিভাষিক শিক্ষার অভিজ্ঞতাযর আনন্দ খুঁজে পায়।
তারা বলছে, দুটি ভাষা শেখার গুরুত্ব আছে, তাদের কেউ নতুন শব্দ শিখতে পছন্দ করে, কেউ বন্ধুদের সাথে কোরিয়ান ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করে।
এবং জংসু জুংয়ের মত শিক্ষকদের জন্য এটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি বলছেন,”অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের অন্যান্য ভাষার সাথে পরিচিত হওয়া উচিত কারণ এটি তাদের বিভিন্ন সংস্কৃতি বুঝতে এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ করার এবং ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে বিভিন্নভাবে সাহায্য করে।”
যদিও ক্যাম্পসি পাবলিক স্কুল অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র স্কুল যা কোরিয়ান দ্বিভাষিক শিক্ষা দিয়ে থাকে, তবে বর্তমানে ৯,৫০০-এরও বেশি শিক্ষার্থী দেশব্যাপী ৬৮টি স্কুলে কোরিয়ান ভাষা শিখছে, ফলে গত এক দশকে প্রায় ১০০০ শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই প্রবণতা স্কুল শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও ছড়িয়েছে।
২০২৪ সালে সিডনির কোরিয়ান কালচার সেন্টারে কোরিয়ান ভাষার ক্লাসের জন্য ৪৩০ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধিত হয়েছে, যা ২০১১ সাল থেকে পাঁচগুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
কোরিয়ান কালচার সেন্টারের কোরিয়ান ভাষা প্রোগ্রাম ম্যানেজার জোয়ান তাই বলছেন, কোরিয়ান ভাষার ক্লাসের জনপ্রিয়তা বিস্ময়কর।
কিউং মিন না, কোরিয়ান কালচারাল সেন্টারের একজন কোরিয়ান শিক্ষক, কোরিয়ান জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিভিন্ন দিকের প্রতি আগ্রহের কারণে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন।
৬০ বছর বয়সী নর্দার্ন বীচের বাসিন্দা, ডায়ান গডলি তাদের একজন।
তিনি বলছেন, অবসরে কে-ড্রামা দেখতে গিয়েই কোরিয়ান বর্ণমালার প্রতি আগ্রহ জন্মায়।
মিজ গডলি বলছেন যে, কে-ড্রামাগুলি তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন জগত খুলে দিয়েছে।
তিনি বলছেন,“আমি আমেরিকা সম্পর্কে কিছু দেখতে আগ্রহী নই কারণ আমার আমি তাদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানি। কিন্তু কোরিয়া সম্পর্কে জানা আমার জন্য সত্যিই দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা, কারণ আমেরিকান নাটকে আপনি কখনই তাদের খেতে এবং কথা বলতে দেখেন না। কিন্তু কোরিয়ান নাটকে খাওয়ার বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়, সেইসাথে তাদের সমস্ত খাবার সম্পর্কে জানাও হয়। এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন জগত।”
তবে বিশেষজ্ঞরা কোরিয়ান ভাষা শেখার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে হালিউ বা কোরিয়ান জনপ্রিয় সংস্কৃতির বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার প্রভাবকে দায়ী করেছেন।
মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির কোরিয়ান স্টাডিজের একজন সিনিয়র লেকচারার ড. -নিকোলা ফ্রাসকিনি হালিউর তাৎপর্য স্বীকার করেন, কিন্তু এটিই একমাত্র চালক নয় বলে মনে করেন।
তিনি বলছেন, “কোরিয়ান অর্থনৈতিক উন্নয়ন গত এক দশকে আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে এবং এটি কোরিয়ান সংস্কৃতি এবং কোরিয়া সম্পর্কে বিদেশে যে ইতিবাচক ধারণা রয়েছে, সেই কারণগুলিও যুক্ত।”
ভাষা ও সংস্কৃতির এই শিক্ষা শ্রেণীকক্ষের বাইরে প্রসারিত হয়, এটি বোঝাপড়া এবং সংযোগ বৃদ্ধি করে।