হাইকোর্ট কর্তৃক কোটা বাতিলের পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণার রায় প্রত্যাখ্যান করেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাবেক নেতারা। আপিল বিভাগের মাধ্যমে এই রায় স্থগিত করতে রাষ্ট্রপক্ষ যাতে উদ্যোগ নেয়, সেই দাবি জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে গণঅধিকার পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই দাবি জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাবেক নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮ এর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, ২০২১ সালের একটি রিটের প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার মহামান্য হাইকোর্ট সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কর্পোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে অযৌক্তিক কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত ধারাবাহিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ওই বছর ৪ অক্টোবর সরকারের সিদ্ধান্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন কর্পোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করেন।
তিনি বলেন, সেসময় পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধারভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি বাতিল করা হলো।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক আন্দোলনের যৌক্তিকতা বিবেচনায় সরকার তৎকালীন মন্ত্রীপরিষদ সচিব শফিউল আলমের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে ও কমিটির সদস্যের পর্যালোচনার ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। তাহলে কেন ২০১৮ সালের একটি মীমাংসিত বিষয় নিয়ে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে? শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন শেষে সাধারণ শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে ফিরে গেছে। এখন বিসিএসসহ সকল ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরিতে মেধাবীরা সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী নেতারা এখনোও মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার হাজিরা দিচ্ছে ,গুরুতর আহতরা কষ্টে দিনযাপন করছে। তারপরও আগামীর বাংলাদেশ বির্নিমাণে আমরা চাই মেধাবীরা রাষ্ট্র বির্নিমাণ এগিয়ে যাক। তাদেরকে এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের প্রশাসনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মেধাশূন্য করার চক্রান্ত। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা- বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের সঙ্গে প্রতারণা।
এসময় তিনি বলেন, আমরা যারা ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি, তাদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের এই রায় ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
শিক্ষার্থী বন্ধুদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি রেখে অনতিবিলম্বে হাইকোর্টের এই রায় আপিল বিভাগের মাধ্যমে রাষ্ট্রপক্ষকে স্থগিত করার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর। উপস্থিত ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান, আব্দুজ জাহের, মঞ্জুর মোরশেদ প্রমুখ।