Home Bangladesh খুলনার আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা সমন্বয়কদের, একাংশের প্রত্যাখ্যান

খুলনার আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা সমন্বয়কদের, একাংশের প্রত্যাখ্যান

61
0

খুলনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খুলনা সার্কিট হাউসে ১১ ছাত্র ও অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মেয়র, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা। বৈঠকের পর তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহারেরর ঘোষণা দেন।

এ সময় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের সমন্বয়ক তানভীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছি। তবে খুলনাতে আমরা কোনো সহিংসতা করিনি। এখন আন্দোলনটা ভিন্ন খাতের দিকে চলে যেতে পারে, তা নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হলো। আমরা জানিয়ে দিচ্ছি আমাদের পরবর্তীতে আর কোনো কর্মসূচি নেই।’

তবে রাতেই শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ প্রত্যাহারের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন। অনলাইনে বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে মঙ্গলবার রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, খুলনার গ্রুপে এ তথ্য জানানো হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মিরাজ অন্য সব সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়কদের পক্ষে এ ঘোষণা দেন।

পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্যাডে ‘স্পষ্ট বিবৃতি’ শিরোনামে আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে ফেসবুক গ্রুপ ‘কেইউ ইনসাইডার’ এবং ‘থট বিহাইন্ড দ্য কেইউ’ প্রকাশ করা হয়। এতদিন এ দুটি গ্রুপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচি ঘোষণা এবং প্রকাশ করতেন।

স্পষ্ট বিবৃতিতে বলা হয়, ‘চলমান আন্দোলনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোনো সমন্বয়ক ছিল না। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীদের দিয়ে জোরপূর্বক যে প্রেস ব্রিফিং করানো হয়েছে তা নোংরা রাজনীতির অংশ ছাড়া কিছুই নয়। এ অবস্থায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা এই বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করছি।’

সার্কিট হাউসের বৈঠকের পর থেকে ‘প্রত্যাহার’ এবং ‘প্রত্যাখ্যান’ করা শিক্ষার্থীদের সবার মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে। বৈঠকের আলোচনা এবং পরবর্তী করণীয় নিয়ে তাদের কাছে বাড়তি কিছু জানা যায়নি।

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর বিভিন্ন থানা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ফোন করে রাত ৯টায় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সদর দপ্তরে উপস্থিত থাকতে বলা হয়। পরবর্তীতে সময় ও স্থান পরিবর্তন করে রাত ১০টায় সার্কিট হাউসে নির্ধারণ করা হয়।

সভায় খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে আলোচনার বিষয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। শিক্ষার্থীরাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

বৈঠক শেষে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং করেন। সেখানে আজম খান কমার্স কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ও কোটা আন্দোলনের সমন্বয়ক শেখ রাফসান জনি বলেন, খুলনাতে আন্দোলনের সময় আমাদের সঙ্গে পুলিশের কোনো সংঘর্ষ হয়নি। এজন্য পুলিশ প্রশাসন আমাদের ধন্যবাদ জানিয়েছে। আজ থেকে আমাদের আর কোনো কর্মসূচি নেই, আমরা সব আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিয়েছি।

সভা শেষে সিটি মেয়র ও পুলিশ কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম কামাল হোসেন বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ খুলনার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ডেকে আমরা বললাম তোমাদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। খুলনায় পুলিশ যদি তোমাদের নামে কোনো মামলা দিয়ে থাকে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। তোমাদের আমরা অনুরোধ করব, তোমাদের এই আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে জামায়াত-বিএনপি যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, এটা বন্ধ করতে সহায়তা করো। এ আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন সবগুলো তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা তা মেনে নিয়েছেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here