যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্ব ও সুরক্ষার প্রতিশ্রুতিতে অটল আছেন এবং থাকবেন। কিন্তু গাজায় যে মানবিক দুর্দশা চলছে তা অবর্ণনীয়। এ ব্যাপারে তিনি চুপ থাকবেন না।
বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন কমলা। বৈঠকেও গাজার মানবিক সংকট নিয়ে কমলার প্রশ্নের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কমলা জানান, তিনি ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার দিকে জোর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। সেখানে অনেক বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। তা লুকানো কিছু নেই। কিন্তু ইসরায়েলের স্বার্থের প্রশ্নেও তিনি কোনো ছাড় দেবেন না।
তিনি বলেন, গত ৯ মাসে গাজায় যা ঘটেছে তা বিধ্বংসী। মৃত শিশুদের ছবি এবং ক্ষুধার্ত মানুষের নিরাপত্তার জন্য পলায়ন তাকে ব্যথিত করেছে। এসব মানুষ কখনও কখনও দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থবারের জন্য বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আমরা এই ট্র্যাজেডিগুলোর দিকে আর তাকাতে পারছি না। আমরা নিজেদেরকে কষ্টের কাছে অসাড় হতে দিতে পারি না। আমি আর চুপ থাকব না।
গাজায় মানবিক বিপর্যয় রোধে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রস্তাবে রাজি হওয়ার জন্যও নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানান কমলা। তেমনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে জানান, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের প্রতিও তিনি সচেতন।
কমলা গাজা ইস্যুতে এ ধরনের বক্তব্য দিলেও খোদ তার দল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে এ নিয় মতবিরোধ আছে। একটি পক্ষ গাজা যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে, অপর পক্ষ গাজায় সন্ত্রাসী বাহিনী ধ্বংসে ইসরায়েলের হামলাকে সমর্থন দিচ্ছে। এমনকি তারা ইসরায়েলকে আরও শক্তিশালী করার ওপর জোর দিচ্ছে।
গত রোববার (২১ জুলাই) দুপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ওই ঘোষণায় তিনি কমলাকে সমর্থন জানান। এরপর শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট নেতা এবং অনেক তহবিলদাতা কমলাকে সমর্থন জানান। মুহূর্তে কমলার প্রচারশিবিরে অর্থ জমা হতে থাকে। এক হিসেবে গত ৩৬ ঘণ্টায় তা ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৯ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে হাজারো মানুষ কাতরাচ্ছেন। তাদের অনেকের ভাগ্যে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবাও জুটছে না। হামলা হচ্ছে হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক সংস্থার চিকিৎসা ক্যাম্পেও।
এ ছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অন্তত ৯ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫৯০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছেন।
তবে আশার কথা হলো গত ১৯ জুলাই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। রায়ে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলের কয়েক দশক ধরে দখলদারত্বকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে বিদ্যমান সব ইসরায়েলি বসতি সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায় আদালত।