র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) ব্যারিস্টার মো. হারুন অর রশিদ দাবি করেছেন, বাংলাদেশে আর জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ ও উগ্র মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।
সোমবার (১ জুলাই) হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গুলশান মডেল থানার সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন দাবি করেন তিনি।
তিনি বলেন, জঙ্গি তৎপরতা নিয়ন্ত্রণে বর্তমানে র্যাব অনেক আধুনিক হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জঙ্গিরা তৎপর আছে। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডেও তৎপর র্যাব। পলাতক জঙ্গিদের নজরদারি মধ্যে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে জঙ্গি তৎপরতার কোনো তথ্য নেই। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানে অবস্থিত হলি আর্টিসান বেকারি রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা হয়, যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড় হয়। আন্তর্জাতিক একটি জঙ্গি সংগঠন এর দায় স্বীকার করে। অবশ্য পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি থেকে বেরিয়ে আসা অতি উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী ‘নব্য জেএমবি’ ওই নৃশংসতা চালায়। ওই হামলায় পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২২ জন নিহত হন। নিহত ১৭ বিদেশির মধ্যে ৯ জন ইতালিয়ান, ৭ জন জাপানিজ এবং একজন ভারতীয়। অন্য তিনজনের মধ্যে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এবং অন্য দুজন বাংলাদেশি। নিহত অপর দুজন পুলিশ কর্মকর্তা।
ওই নৃশংসর পর হলি আর্টিসানে ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ড’ নামে সেনা অভিযানে সরাসরি হামলায় যুক্ত পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। পরে পুলিশি তদন্তে হামলায় নানাভাবে যুক্ত আরও ২১ জঙ্গির সম্পৃক্ততা মেলে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টানা অভিযানে বিভিন্ন আস্তানায় ১৩ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পুলিশ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। বিচার কার্যক্রম শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর নিম্ন আদালত নব্য জেএমবির জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, আসলাম হোসেন ওরফে র্যাশ, হাদিসুর রহমান, রাকিবুল হাসান রিগ্যান, আব্দুস সবুর খান, শরিফুল ইসলাম ওরফে খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন ধারায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন। অন্য আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেন আদালত। উচ্চ আদালতও ওই জঙ্গিদের শাস্তি বহাল রাখেন।
জঙ্গিবাদ নির্মূল ও নজরদারির দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সূত্র জানায়, আবু বকর সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার পর নব্য জেএমবি অনলাইনসহ নানা মাধ্যমে কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা করছে। এই সংগঠনটির চেয়ে এখন বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে আরেক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম, যেটি শুরুতে আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটি) নামে দেশে ভয়ংকর নাশকতা চালিয়েছে।
ওই সূত্রটি জানায়, সম্প্রতি নরসিংদীতে আধা স্বয়ংক্রিয় টুটু রাইফেলসহ এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়। থানা পুলিশ ওই ঘটনায় অস্ত্র আইনে মামলা নিলেও জঙ্গিবাদ দমনে যুক্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত হয়, ওই ব্যক্তি আনসার আল ইসলামের সদস্য। এর পরই নেত্রকোনায় সংগঠনটির একটি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।