নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে মিসরের ক্ষমতা দখল করে নিয়েছিলেন সেনা কর্মকর্তা আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসি। জোর করে ক্ষমতায় বসে দেশের অর্থনীতিতেও ধস নামিয়ে দিয়েছেন তিনি। এখন অর্থনীতি চাঙা করতে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে চাইছে মিসর। আর এ জন্য কিছু অজনপ্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছেন সিসি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এমন কিছু বিপজ্জনক পদক্ষেপ নিয়েছে মিসর, তাতে দেশটির কিছু অঞ্চল হারানোর উপক্রম হয়েছে।
মিশরের সরকারি সূত্র জানিয়েছে, মিসরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থ মজুত রয়েছে সৌদি আরবের। সেই অর্থ ব্যবহার করে লোহিত সাগর তীরবর্তী পর্যটন এলাকা রাস জামিলা এবং মিসরের কয়েকটি সরকারি কোম্পানি কেনার প্রস্তাব দিয়েছে রিয়াদ। মিসরের সরকারি ব্যবসা খাত বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সৌদির এমন প্রস্তাবে আগেই সাড়া দিয়েছে কায়রো।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের এমনই একটি চুক্তি সই করে মিশর। ওই চুক্তি অনুযায়ী ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী রাস এল হেকমা রিসোর্ট উন্নয়নে কাজ করবে আমিরাত। এর বিনিময়ে মিসরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে থাকা আমিরাতের ১১ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হবে কায়েরা। সৌদির কাছ থেকেও একইভাবে বৈদেশিক মুদ্রা পাবে মিসর।
মিসরের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সৌদি আরবের প্রায় ১০.৩ বিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। এই অর্থ দিয়ে রাস জামিলার উন্নয়নের পাশাপাশি মিসরের শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠা সেরা এডুকেশন এবং আবাসন, উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, ইলেকট্রিসিটি, ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস এবং খাদ্য খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিনতে চায় রিয়াদ। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে।
রাস জামিলা বর্তমানে জনপ্রিয় একটি ডাইভিং সাইট। এটি দক্ষিণ সিনাই গভর্নরেটের শার্ম এল শেখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রায় সাড়ে ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। রাস জামিলার ঠিক উল্টো পাশেই রয়েছে লোহিত সাগরের দুই দ্বীপ তিরান ও সানাফির। ২০১৬ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে এই দুই দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ সৌদির হাতে তুলে দেয় মিসর। এ নিয়ে তখন মিসরে ব্যাপক বিক্ষোভও হয়েছিল।
তিরান ও সানাফির দ্বীপের কাছাকাছি হওয়ায় রাস জামিলা নিয়ে সৌদি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি। আবার সৌদি মেগা প্রজেক্ট নিওমের জন্য হলেও রাস জামিলা দরকার রিয়াদের। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে মিসরের সরকারি ব্যবসা খাতের মন্ত্রী মাহমুদ এসমাত জানান, তার সরকার রাস জামিলায় বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। মিসরীয় এই মন্ত্রীর ভাষায় প্রায় ৮ লাখ ৬০ হাজার স্কয়ার মিটারের রাস জামিলার কৌশলগত মূল্য রয়েছে।
নতুন প্রশাসনিক রাজধানী নির্মাণের মতো মেগাপ্রজেক্টসহ অস্ত্রচুক্তির কারণে বিপুল ঋণের বোঝার নিচে চাপা পড়েছে মিসর। এত কোটি কোটি ডলার ঋণের দায় মেটাতে দেশটিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের দ্বারস্থ হতে হয়। তােতই খুব একটা কাজ না হওয়ায়, অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে ২০১৮ সাল থেকে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিক্রি করছে মিসর।