বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। রোববার (১৪ জুলাই) ২৪ ঘণ্টায় ৯ সেন্টিমিটার পানি কমে এখনো বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বেড়েছে বাঙালি নদীর পানি। কয়েকদিন ধরেই পানি বিপৎসীমার ওপর থাকায় বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। তিন উপজেলার ৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮টি, একটি মাদ্রাসা ও ৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেশিরভাগেই পাঠদান বিকল্প ব্যবস্থায় চালু রয়েছে। কোথাও কোথাও বাড়ির আঙিনায় চলছে পাঠদান।
এই তিন উপজেলার মধ্যে সারিয়াকান্দিতে ৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ছয়টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সোনাতলা উপজেলায় ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি মাদ্রাসা, দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ধুনটে চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
ধুনট উপজেলার ভান্ডাবাড়ি ইউনিয়নে পানিতে নিমজ্জিত বিদ্যালয়গুলো হলো উপজেলার কৈয়াগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিমুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও রাধানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী লেখাপাড়া করে থাকে। পানি ঢুকে পড়ায় বিদ্যালয়ে পাঠদান করানো যাচ্ছে না। এ কারণে বিদ্যালয়ের আশপাশে উঁচু বাড়ি কিংবা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর খোলা আকাশের নিচে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হচ্ছে।
রোববার বন্যার পানির নিচে ডুবে আছে। তবে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি। পাঠদান চলছে বিকল্পভাবে। কৈয়াগাড়ি সাবেকপাড়া গ্রামের সাবেক শিক্ষক সুরুজ্জামানের বাড়ির আঙিনায় স্কুল বসিয়ে সেখানে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। তবে উপস্থিতি খুবই কম। কৈয়াগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০২ জন হলেও রোববার উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৩০ জন।
কৈয়াগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছানারুল হক বলেন, বন্যার কারণে উপস্থিতির হার কম। তবে এ বিদ্যালয় শিশু থেকে ৫ম শ্রেণি পযন্ত মোট ১০২ ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। রোববার সব ক্লাস মিলে ৩০ জন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত হয়েছে।
ধুনট উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, উপজেলার চারটি বিদ্যালয়ের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করেছে। এ কারণে বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান করানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে শিক্ষকদের বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদানের উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম কবির বলেন, শিক্ষকদের বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদান করাতে বলা হয়েছে। বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা যেভাবে নির্দেশনা দেবেন পরবর্তীতে সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে উপজেলার বানভাসি মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ নিজেদের বসতভিটার উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাথরুম পানিতে নিমজ্জিত থাকায় তারা এখন পয়ঃনিষ্কাশন জনিত সমস্যায় রয়েছেন এবং বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন।
এ ছাড়া চরাঞ্চলের মানুষ তাদের গৃহপালিত পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। চরের বিশালাকার গোচারণভূমি প্লাবিত হওয়ার কারণে তারা পশুখাদ্য সংগ্রহ করতে পারছেন না।
এখনো ৮২টি গ্রামের ৬৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। খাবার সংকটে রয়েছে ৭৫ হাজার গবাদিপশু। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় ১ হাজার ৪৫৭ হেক্টর জমির ফসল। এদিকে গত কয়েকদিন ধরেই পানি বিপৎসীমার ওপর থাকায় উপজেলার বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এ উপজেলার ১১ হাজারের বেশি কৃষক পরিবার দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন।
কামালপুর ইছামারা গ্রামের মর্জিনা বেগম বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই বাড়িতে পানি উঠেছে। তাই বাঁধের একটি ঝুপড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। রান্নাবান্না, টিউবওয়েলের পানি, বাথরুম এবং গরু ছাগলগুলো নিয়ে কষ্টেই আছি। গরু ছাগলের খাদ্য সংকট প্রকট। জমির ফসলগুলো তো পানিতে ডুবে আছে।’
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, ১ হাজার ৪৫৭ হেক্টর আক্রান্ত ফসলের মধ্যে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর জমির পাটগাছ পানিতে ডুবে গেছে। যেহেতু গত কয়েকদিন ধরেই ফসলগুলো পানিতে নিমজ্জিত, তাই ফসলগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান বলেছেন, এরই মধ্যেই ১১ হাজার ২৭০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে এবং ৫৫০টি পরিবারের মধ্যে গো খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে।