দেশের ১১টি জেলায় ভয়াবহ বন্যার পর আবারও নতুন করে ৫টি জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। টানা ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিস্তার পানি বর্তমানে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে, যার ফলে নদীর চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার প্রায় ২৩ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। অসময়ে এই অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে তিস্তার পানি এই হারে বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ভারী বৃষ্টির কারণে নদীর তীরবর্তী এলাকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ভারী বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে রংপুর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। রোববার সকালে ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ ছিল ৫২.১৭ সেন্টিমিটার, এবং এরই মধ্যে ব্যারাজের সব কপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট:
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার মধ্যে ৪টিতে ১৭,৩৫০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিন জানিয়েছেন, তার বাড়িঘর তিস্তার পানিতে ডুবে গেছে, এবং পরিবার নিয়ে তারা বর্তমানে সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, দুর্গতদের জন্য ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
নীলফামারী:
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী ১৫টি গ্রামের ৫,০০০ এর বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের প্রায় ১,২০০ পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার ১,০০০ এর বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। যদিও রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল, তবুও ধরলা, গঙ্গাধর, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল।
রংপুর:
রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র থেকে পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলাগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গাইবান্ধা:
গাইবান্ধার নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলার ৪০০ এর বেশি পরিবার বন্যার কবলে পড়েছে। তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, অন্যান্য নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও বড় বন্যার আশঙ্কা নেই।