এক পাশে বাবা, আরেক পাশে মা, মাঝে দাঁড়িয়ে ছিল ছোট্ট আবদুল আহাদ (৪)। বাসার বারান্দায় দাঁড়ানো তিন জোড়া চোখ নিচের দিকে তাকিয়ে। বাসার নিচে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ চলছে। আচমকা মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে আহাদ।
বাবা ভেবেছিলেন ছেলে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। ছেলেকে ধরে তুলতে গিয়ে বুকের রক্ত হিম হয়ে যায় আবুল হাসানের। ছেলেটার চোখ, মুখ, মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। গুলিটা ডান চোখে বিদ্ধ হয়ে মাথার ভেতরেই আটকে গেছে।
গত শুক্রবার ১৯ জুলাই বিকেল চারটার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রায়েরবাগ এলাকার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ১১ তলা বাড়িটির আটতলায় থাকেন আবুল হাসান, তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার, বড় ছেলে দিহান মাতুব্বর (১১) ও ছোট ছেলে আহাদ। আয়কর বিভাগের উচ্চমান সহকারী আবুল হাসানের বাড়ি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামে।
একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়ে আমার ছেলে চলে গেল। এ নিয়ে আমি আর কী বলব! চেয়েছিলাম পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) না করতে। অতটুকু শরীর যাতে আর কাটাছেঁড়া করা না হয়। কিন্তু আমাদের সে চেষ্টাও সফল হয়নি।
বাবা আবুল হাসান
রক্তাক্ত ছেলেকে কোলে নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসেন হাসান। অস্ত্রধারীরা এগিয়ে এসে তাঁকে বাধা দেয়। পরে ছেলের রক্তাক্ত অবস্থা দেখে সরে দাঁড়ায়। হাসানের ভাই মোকলেসুর রহমান গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, আহাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা বলেন, গুলি মাথার মধ্যে আছে। কিন্তু কোন অবস্থানে আছে, তা বোঝার জন্য সিটিস্ক্যান করতে হবে। কিন্তু সিটিস্ক্যান করতে নেওয়া হলে আইসিইউর যন্ত্রপাতি খুলে ফেলতে হবে। এতে শিশুটির মৃত্যুও হতে পারে। তবে সিটিস্ক্যান করাও জরুরি।
মোকলেসুর রহমান বলেন, পরের দিন শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আহাদকে মৃত ঘোষণা করা হয়। মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে রোববার বেলা তিনটার দিকে আহাদের মরদেহটি তাঁরা বুঝে পান। তারপর অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গ্রামের বাড়ি ভাঙ্গার পুখুরিয়া গ্রামে চলে যান। বাদ মাগরিব পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আহাদকে। ‘বাড়িতে আগে পারিবারিক কবরস্থান ছিল না। আহাদকে দাফনের মধ্য দিয়েই কবরস্থানটির যাত্রা শুরু হলো,’ আবেগভরা কণ্ঠে কথাগুলো বললেন মোকলেসুর রহমান।
রাজধানীর উত্তরার নাইমা সুলতানা (১৫) মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। উত্তরার ৫ নম্বর সড়কে ভাড়া বাসার চারতলার বারান্দায় গত শুক্রবার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় মেয়েটি। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে।
মুঠোফোনে কথা হয় আবুল হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হয়ে আমার ছেলে চলে গেল। এ নিয়ে আমি আর কী বলব! চেয়েছিলাম পোস্টমর্টেম (ময়নাতদন্ত) না করতে। অতটুকু শরীর যাতে আর কাটাছেঁড়া করা না হয়। কিন্তু আমাদের সে চেষ্টাও সফল হয়নি।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে কয়েক দিন দেশজুড়ে সংঘাত, সহিংসতায় দুই শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে আহাদ ছাড়া আরও তিনটি শিশু বাড়ির ভেতরে থেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
রাজধানীর উত্তরার নাইমা সুলতানা (১৫) মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ত। উত্তরার ৫ নম্বর সড়কে ভাড়া বাসার চারতলার বারান্দায় গত শুক্রবার গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় মেয়েটি। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে।
নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় বাসার ছাদে খেলার সময় মাথায় গুলি লাগে রিয়া গোপের। কোলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের মাথায় গুলি লাগে। মেয়েটি তখনি বাবার কোলে লুটিয়ে পড়ে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। শিশুটির বয়স ছিল সাড়ে ছয় বছর।
একই দিন বাড়ির জানালা দিয়ে আসা একটি বুলেট চোখ দিয়ে ঢুকে মাথার খুলি ভেদ করে বেরিয়ে যায় সাফকাত সামিরের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ১১ বছরের ছেলেটির। ওই দিন মিরপুরে কাফরুল থানার সামনের সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলছিল।
আর নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় বাসার ছাদে খেলার সময় মাথায় গুলি লাগে রিয়া গোপের। কোলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের মাথায় গুলি লাগে। মেয়েটি তখনি বাবার কোলে লুটিয়ে পড়ে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। শিশুটির বয়স ছিল সাড়ে ছয় বছর।