ঝালকাঠির বাসন্ডা নদীর ওপর দাঁড়িয়ে আছে ১২৪ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭ দশমিক ৩০ মিটার প্রস্থের বেইলি ব্রিজ। ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেতুটি নির্মাণের ৩৪ বছর পরও এটির ওপর দিয়ে চলেছে যানবাহন। বর্তমানে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পরিণত হয়েছে। মেরামত করলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। সেতু কর্তৃপক্ষ তিন বছর আগে এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও নতুন সেতু নির্মাণে কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়। প্রতি বছর সেতু সংস্কারে ব্যয় করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মাসে সেতুটি মেরামতে তাদের খরচ গুনতে হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছে ঝালাই, স্থানচ্যুত হচ্ছে প্লেট এবং খুলে যাচ্ছে নাট-বল্টু। তার পরও সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে ভারী যানবাহন। গাড়ি উঠলেই সেতুটি দুলতে থাকে। ফলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
সেতুটি ভেঙে পড়লে ঝালকাঠি থেকে বরগুনা পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা ও যশোরসহ সীমান্তবর্তী এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। স্টিলের সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে সেখানে একটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদিত হলে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, বারবার মেরামত করা হলেও সেতুটি কয়েকদিনের মধ্যেই ফের যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। নাট-বল্টু খুলে পড়ার পাশাপাশি ফেটে যায় প্লেট। এ ছাড়া সেতুতে ভারী যানবাহন উঠলে দুলতে থাকে। এ পথে যাতায়াতকারী যাত্রী, চালক ও পথচারীরা বাসন্ডা সেতু নতুন করে নির্মাণের জোর দাবি জানান।
তারা আরও জানান, বাসন্ডা সেতুটি কয়েকবছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পরও এত দিনে সেখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। আবার প্রতিবছর মেরামতের পেছনে সওজ যে অপচয় করছে, তাতে সরকারের অর্থ পানিতেই পড়ছে।
সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, দরপত্র ছাড়া নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বছরে তিনবার সেতুটি মেরামত করে সড়ক বিভাগ। প্রতিবার মেরামতে খরচ হয় ৬ লাখ টাকা। গাবখান সেতু টোলপ্লাজা থেকে জানা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ শতাধিক ভারী যানবাহন চলাচল করে। বারবার মেরামত করা হলেও সেতুটি কয়েক দিনের মধ্যেই ফের যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
ট্রাকচালক মহিম মিয়া বলেন, লোড ট্রাক নিয়ে ব্রিজে উঠলে মনে হয় এ বুঝি ভেঙে পড়ল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।
খুলনাগামী একটি বাসের চালক মালেক হাওলাদার বলেন, রাতে ব্রিজ পার হওয়ার সময় যে শব্দ হয়, তাতে মনে হয় গাড়ির চাকা থেকে টায়ার খুলে গেছে। ব্রিজটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। মেরামতে আর কাজ হবে না। এখন নতুন করে নির্মাণ করা দরকার।
ধানসিঁড়ি পরিবহনের বাসচালক ইদ্রিস হাওলাদার বলেন, ব্রিজে গাড়ি উঠলে দুলতে থাকে। মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে। এখানে দ্রুত নতুন ব্রিজ বানানো দরকার, তা না হইলে যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে
এ রুটের নিয়মিত যাত্রী আবুল কাশেম বলেন, আমাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে দিনের পর দিন। হয়ত বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে। এ ব্রিজের পাশেই রয়েছে নেছারাবাদ মাদরাসা। যেখানে মাহফিল অনুষ্ঠিত হলে প্রচুর যানবাহনের চাপ বেড়ে যায়। যানবাহনের চাপে দুলতে থাকে ব্রিজটি।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহরিয়ার শরীফ খান বলেন, এ সেতুটি ঝুকিপুর্ণ হওয়ায় ইতোমধ্যে নতুন সেতু নির্মাণের জন্য আমরা ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পন্ন করেছি। বাকি তথ্যগুলো আমরা প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে পাঠিয়েছি। ডিপিপি বাস্তবায়ন হলে শিগগির এখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির জন্য ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইম্প্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালকের কাছে সম্ভাব্য সেতুর যে তালিকা চূড়ান্ত করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে বাসন্ডা সেতুর নামও রয়েছে। অনুমোদন পেলেই নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বাসন্ডা বেইলি সেতুটি কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করার জন্য নকশা একে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, আমি যোগদানের পর ৯ মাসে ৪ লাখ টাকা দিয়ে সেতুটি মেরামত করেছি। ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা সেতুটি বর্তমানে ঝালকাঠি সড়ক বিভাগের গলার কাঁটা।