সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাইগুনি গ্রামের মামুনুর রশিদ মামুন (৩৫) ও একই উপজেলার নাড়ুয়ামালা দোয়ারপাড়া এলাকার নিয়ামুল হাসান জেমস (৩৬) রয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর এলাকায় তাদের অপকর্মের কথা ছড়িয়ে পড়েছে। দুজনের পরিবারের সবাই এমনকি আত্মীয়স্বজনও করেন সরকারি চাকরি।
মামুনের বাড়ি বগুড়ার গাবতলী উপজেলার বাইগুনী মণ্ডলপাড়া গ্রামে। বাবার নাম মোস্তাফিজুর রহমান। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে চাকরি করতেন তিনি।
মামুনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বাইগুনীতে মামুনদের পুরোনো একটি টিনশেড বাড়ি রয়েছে। সেখানে থাকেন মামুনের বাবা-মা, ভাই-ভাবি ও ছোট বোন। গত বছরের ঈদুল আজহার পর ঢাকায় যান তিনি। এর আগে রাজশাহীতে চাকরি করতেন মামুন। ঢাকা থেকে বাড়িতে এলে মামুন স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ওই বাড়িতেই ওঠেন। এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে তার। প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মামুন গ্রেপ্তার হয়েছে, বিষয়টি জেনে অবাক প্রতিবেশীরা। মামুন এমন কাজ করতে পারেন, বিশ্বাস করতে পারছেন না তারা।
জানা গেছে, মামুনরা দুই ভাই। তার বাবা বগুড়া ড্রাগস কোম্পানিতে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি করেন। ছোট ভাই ফারুক চাকরি করেন বগুড়ার আদমদীঘিতে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে।অর্থ ও জমির বিনিময়ে এলাকায় বেশ কয়েকজনকে চাকরিও দিয়েছেন। মামুনের ভাই ফারুকুল ইসলামকে চাকরি দেন প্রকৌশল অধিদপ্তরে। ফারুকুলের স্ত্রী চাকরি করেন একই দপ্তরে। চাচাতো ভাই মহিদুল ইসলাম, জিদাহ হাসান ও জিকো চাকরি করেন কৃষি অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখায়।
মামুনের প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, সে (মামুন) এলাকায় থাকার সময় খারাপ কিছু দেখিনি। গত পরশু বিষয়টি জানতে পেরেছি। শুনে খারাপ লেগেছে। এত ভালো ছেলেটা এমন কাজ করতে পারল। নিয়ামুল হাসানের দুই বোন জেমি বেগম ও জেলি বেগম এবং স্ত্রী মৌসুমী আক্তার, ভগ্নিপতি এবং চাচাতো-ফুপাতো ভাইসহ ১১ জনকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন তিনি।
নিয়ামুল নিজ এলাকার পলাশ হাসান নামে এক যুবককে এক বিঘা জমির বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
বাইগুনী গ্রামের সাবেক মেম্বার মো. খোকন বলেন, মামুন একান্নবর্তী পরিবারেই থাকেন। পরিবারের আর্থিক অবস্থা এবং সম্পদ আগের মতোই রয়েছে। তারা আগে থেকেই মোটামুটি স্বচ্ছল। মামুনদের ১০ বিঘা জমি এবং গরুর খামার অনেক আগে থেকেই রয়েছে। প্রশ্নফাঁসের ঘটনা পত্রিকায় ও টেলিভিশনে দেখেছি। মামুনকে দেখে আমি তো অবাক।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মামুনের এক প্রতিবেশী বলেন, গাবতলীর হামিদপুরের মামুনের আপন ফুফাতো ভাই জেমস মামুনকে পাসপোর্ট অফিসে চাকরি নিয়ে দেন। এরপর জেমস মামুনকে ড্রাইভার আবেদ আলীর ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। এরপর মামুন বাইগুনী এলাকার ৭ জন এবং বাউটুনা গ্রামের ১২ জনকে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে চাকরি দিয়েছেন। প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা নিয়েছেন। মামুনের মাধ্যমেই তার ছোট ভাই পরিবার পরিকল্পনায়, তার ভাবিকে প্রাইমারি স্কুলে এবং প্রতিবেশী এক ভাতিজাকে রেলওয়েতে চাকরি নিয়ে দেন। এ ছাড়া, সড়ক ও জনপদ বিভাগে বাউটুনা গ্রামের ৭-৮ জনকে চাকরি নিয়ে দিয়েছেন অর্থের বিনিময়ে।
অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা দিয়ে মামুন তার এলাকায় নিজের নামে কোনো জমি না কিনলেও তার বাবা মোস্তাফিজুর রহমানের নামে বাইগুনীতে ৫বিঘা জমি কিনেছেন। এ ছাড়া, তার শ্বশুরবাড়ি দাড়াইল বাজার গ্রামে সম্পদ গড়েছেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে মামুনের পরিবারের লোকজন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বিপ্লব জানান, নিয়ামুল ও মামুনুর রশিদ একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত থেকে অর্থ ও জমির বিনিময়ে চাকরি দিয়েছেন। এ নিয়ে তিনি আগে সরকারের যথাযথ দপ্তরে অভিযোগও দিয়েছিলেন।