বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ডাকা অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিনে রাজশাহীর মোহনপুর থানা, সরকারি খাদ্যগুদাম, ভূমি অফিস ও আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় থানা পুলিশের দুটি এবং উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) একটি গাড়িও পুড়িয়ে দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
এ ছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়েও ভাঙচুর চালানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে কয়েকশ আন্দোলনকারী জড়ো হয়ে এ সহিংসতা চালায়। আন্দোলনকারীরা সকালে মোহনপুর থানা থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে একদিলতলা হাটে অবস্থান করছিলেন। সেখানে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে তারা উপজেলা সদরের দিকে চলে আসেন। এরপর প্রথমেই তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন।
এতে কার্যালয়টির ভেতরের সবকিছুই পুড়ে যায়। এ সময় তারা কার্যালয়ের সামনে থাকা বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর তারা থানার সামনের বিভিন্ন স্থাপনা ও গ্যারেজে আগুন জ্বালিয়ে দেন। এতে থানার দুটি গাড়ি আগুনে পুড়ে যায়। পরে তারা থানার আশপাশে বেশ কয়েকটি দোকানেও সংযোগ করে।
এরপর বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা থানার পাশে থাকা মোহনপুর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের সামনে আগুন দেন। এতে সেখানে থাকা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িটি পুড়ে যায়।
পরে আন্দোলনকারীরা উপজেলা খাদ্যগুদামে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন দেয়। ভাঙচুর করা হয় ইউএনও কার্যালয়ও। এরপর উপজেলা সদর থেকে সরে আন্দোলনকারীরা কেশরহাট পৌর এলাকায় গিয়ে অবস্থান নেন। এই নিয়ে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
রাজশাহীর মোহনপুর থানার ওসি হরিদাস মণ্ডল বলেন, তাদের থানার সামনে বিভিন্ন স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আগুনে পুলিশের দুটি গাড়ি পুড়েছে। তবে আগুন থানার ভেতরে যায়নি। বর্তমানে তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন।
রাজশাহীর মোহনপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়শা সিদ্দিকা বলেন, মোহনপুর থানা, উপজপলার ভূমি অফিস, খাদ্যগুদাম ও আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। তার অফিসও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। তারা এখন পৌরসভার দিকে চলে গেছে। সেখানে থমথমে পরিস্থিত বিরাজ করছে। তারা আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা করছেন।
এদিকে রাজশাহী মহানগরীতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রবিবার বেলা ১১টার দিকে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তালাইমারি হয়ে নগরীর ভদ্র এলাকায় যায়। পরে সেখান থেকে মিছিলটি পুনরায় তালাইমারিতে গিয়ে দুপুর দুটার দিকে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ করে। অপরদিকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরীর শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান চত্বরে দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে তারা বিকেল ৩টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নগরীর তালাইমারি পর্যন্ত যায়। তবে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি শেষ করে চলে যাওয়ায় কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
জানতে চাইলে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। আন্দোলনের নামে কেউ সরকারি স্থাপনায় হামলা কিংবা ভাঙচুরের চেষ্টা চালালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিল। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।