ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় তিনশ’ বছরের পুরোনো ও ঐতিহাসিক বিবি সখিনার মাজার রাতের আঁধারে মাটি খুঁড়ে ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কংক্রিটের ঢালাই ভেঙে প্রাচীন এই মাজারে চার ফুট গভীর গর্ত করে দিয়েছে। তবে কে বা কারা, কী কারণে এই কাজ করেছে তা বলতে পারছেন না কেউই।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বিবি সখিনার মাজারটি রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সন্ধ্যারই সাতঘরিয়া এলাকায় একটি বিশাল পুকুরপাড়ে অবস্থিত। পুকুরটির নামও বিবি সখিনা পুকুর বলে পরিচিত।
জানা গেছে, সাতঘরিয়া এলাকার কবরস্থানের একটি পুকুরের পাশে বিবি সখিনার মাজার কংক্রিটের আস্তরণ দিয়ে তৈরি। এই মাজারের মাঝখানের কংক্রিটের ঢালাই ভেঙে চার ফুট মাটি খোঁড়া হয়েছে। ঘটনার দিন সকালে স্থানীয়রা বিষয়টি দেখতে পেলে মুহূর্তে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ মাজারটি দেখতে ভিড় করছেন।
এলাকাবাসীদের ধারণা, মাজার খোঁড়ার ঘটনা রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা ঘটিয়েছে। কী কারণে মাজার খোঁড়া হয়েছে তা বলতে পারছেন না এলাকাবাসী। ঘটনার আগের দিন, দিনের বেলা বিবি সখিনার মাজার ঠিক ছিল। কিন্তু সকালে তারা দেখতে পান মাজারের ঠিক মাঝখানে চার ফুট গর্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা, আনিসুর, মোজাম্মেল হক, ফারুকসহ আরও কয়েকজন যুবক জানান, বিবি সখিনার মাজার কবে স্থাপিত হয়েছে তার সঠিক ইতিহাস তারা জানেন না। তবে স্থানীয় দুই একজন বৃদ্ধ বলতেছেন, এটি ৩০০ বছরেরও পুরাতন মাজার ও বিবি সখিনা পুকুর।
তারা জানান, পবিত্র মাজারটি যারা খনন করে তছনছ করেছে, তার একটি হীন মানসিকতার কাজ করেছে। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার মতো। তাই আমরা এলাকাবাসী স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাই, জড়িতদের দ্রুত খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। সেইসঙ্গে মাজারটি সংস্কার করে যেন সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মাজারকে কেন্দ্র করে পুকুর পাড়ে গড়ে উঠেছে একটি কবরস্থান ও ঈদগাহ মাঠ, তাই এটির দেখভালের প্রয়োজন রয়েছে বলেও তারা জানান।
জানা গেছে, এ মাজার চত্বরে প্রায় মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে পালন করে আসছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, মাজারে কোনো মানত করলে সেই মানত পূরণ হয়। তাই এলাকাসহ দূরদূরান্ত থেকে নারী-পুরুষ মানত করতে আসেন মাজারে। মানতের সময় তারা ছাগল, মুরগি নিয়ে আসেন। এগুলো এখানে জবাই করেন। মাংস, ভাত ও সবজি রান্না করে মিলাদ শেষে উপস্থিত সকলকে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন। কেউ কেউ আবার মানতের তবারক হিসেবে সিন্নি বা পায়েস রান্না করে নিয়ে আসেন, সকলকে খাওয়ান। প্রায় প্রতিদন অনেকে মাজারে এসে দোয়া-দরুদ পাঠ করেন। কেউ কেউ আবার এটির পরিচর্যাও করেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারি বলেন, বিবি সখিনা নামক মাজার প্রাচীনকালের। এখানে মানুষ এসে দোয়া-দরুদ পড়ে মানত করে। শুনেছি মানুষ অনেকে উপকার পায়। এই মাজারকে বা কারা রাতের আঁধারে খনন করেছে। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে রাণীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়ন্ত কুমার সাহা বলেন, মাজার ভেঙে খনন করে ফেলার খবর পেয়েছি, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাণীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রকিবুল হাসান জানান, বিবি সখিনার মাজারটি রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা খনন করে এটির স্থাপনার বিভিন্ন অংশ ভেঙে দিয়েছে, খবরটি শুনেছি। এটি একটি ঐতিহাসিক মাজার। আমি এ বিষয়ে অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।