Home Bangladesh সাতক্ষীরায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪

সাতক্ষীরায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪

63
0

সাতক্ষীরার আশাশুনি ও সদর উপজেলায় পৃথক তিনটি সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১৪ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও ১০/১২ জন।

সোমবার (৫ আগস্ট) বিকাল পৌনে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা গ্রামে এবং সদর উপজেলার বৈকারী ও মৃগিডাঙ্গা গ্রামে পৃথক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাকনা গ্রামের শেখ জাকির হোসেন (৫৩), একই গ্রামের শেখ শাহাজুর রহমান সাজুর ছেলে শেখ শাকের (২২), মৃত শেখ সুজাত আলীর ছেলে শেখ জাহাঙ্গীর (৪৮), মৃত শেখ আরিফুল ইসলামের ছেলে শেখ আশিক (৩৩), লস্করী খাজরা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শাহিন আলম (২২), একই গ্রামের শেখ আজুয়ার রহমানের ছেলে সজীব (২২), কুড়িকাউনিয়া গ্রামের ওয়ারেজ আলী মোড়লের ছেলে হাফেজ আনাজ বিল্লাহ (২১)।

এ ছাড়া একই ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের নুর হাকিম ঘোরামীর ছেলে আদম আলী (২৩) ও হিজলিয়া গ্রামের ছাত্তার সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন (১৬) এবং সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের বৈকারী গ্রামের মৃত রাফেল সরদারের ছেলে আসাফুর রহমান (৬০), ঘোনা ইউনিয়নের মৃগীডাঙ্গা গ্রামের তোজাম্মেল হকের ছেলে তহিদুল হক (৩০), একই গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে ফারুক হোসেন শান্টু (৪৫), জাকির হোসেনের ছেলে জাহিদ হোসেন (২৪) এবং ঘোনা গ্রামের মৃত জাবেদ আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম (২৭)।

এ ছাড়া গুলিবিদ্ধদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ ঢালী বলেন, সোমবার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে কয়েকশ লোক মিছিল নিয়ে নাকনা গ্রামের জাকির চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ে। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা জাকির চেয়ারম্যানের বাড়ির গেট ভেঙে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তিনি (জাকির) বাড়ির দোতালা থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন।

তিনি বলেন, এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০/১২ জন আহত হন। আহতদের চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে হাফেজ আনাজ বিল্লাহ, আদম আলী ও আলমগীর মারা যান। পরে তাদের মরদেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনলে বিক্ষুব্ধ জনতা জাকিরের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

চেয়ারম্যান আবু দাউদ ঢালী বলেন, একপর্যায়ে রাত পৌনে ৮টার দিকে তারা (বিক্ষুব্ধ জনতা) জাকিরের বাড়িতে ঢুকে তাকে জাকিরসহ তার সঙ্গে থাকা শাকের, জাহাঙ্গীর, শাহিন আলম, সজীব ও আশিককে কুপিয়ে মেরে ফেলে। এ সময় বাড়িতে থাকা জাকিরের স্ত্রী ও মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

এদিকে সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে দুর্বৃত্তরা আসাফুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাত সোয়া ১২টার দিকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আসাফুর রহমান বৈকারী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামানের ভাই।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আহমেদ হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই আসাফুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে।

ঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা বলেন, নিহত সাইদুল ইসলাম ও তহিদুল হক আওয়ামী লীগ এবং ফারুক হোসেন ও জাহিদ হোসেন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। জমি নিয়ে এই গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলে আসছিল। সরকার পরিবর্তন হওয়ার সুযোগে সোমবার রাত ১১টার দিকে জাহিদ গ্রুপের লোকজন সাইদুল গ্রুপের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে সাইদুল ইসলাম, জাহিদ হোসেন, তহিদুল হক ও ফারুক হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় মোস্তফা কামাল নামে একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানাজা শেষে চারজনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে।

অপরদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা সোমবার রাতে সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে দুটি থানা থেকেই অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পুলিশ সদস্যদের সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পরপরই দুর্বৃত্তরা পৃথকভাবে সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া থানায় ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে।

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে সাতক্ষীরা সদর থানায় গিয়ে দেখা গেছে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে থানা ভবন। ভিতরে একটি রুম থেকে তখনো ধোঁয়া বের হচ্ছিল। থানার সব দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here