সুস্থ লোককে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে চাকরি দিতেন প্রশ্নফাঁস কাণ্ডে জড়িত মামুন ও জেমস। বিনিময়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
পিএসসির প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়নের বাইগুনি মধ্য মণ্ডল পাড়া গ্রামের মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে মামুনুর রশিদ (৩৫) ও একই উপজেলার নাড়িয়ামালা ইউনিয়নের দোয়ারপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল গফুর ওরফে জেল্লার ছেলে নিয়ামুল হাসান ওরফে জেমস।
মামুন ঢাকায় পাসপোর্ট অধিদপ্তরে অফিসে সহকারী হিসেবে ও জেমস ঢাকা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেডিকেল টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত।
অভিযোগ আছে, শুধু যে প্রশ্নপত্র ফাঁসেই তারা জড়িত ছিলেন সেটি নয়, তাদের বিরুদ্ধে সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে কোটায় নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এর বিনিময়ে তারা হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
গত বছরের ১২ জুন গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বিপ্লব দুর্নীতি দমন কমিশনে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এক বছর পার হলেও সেই অভিযোগের কোনো তদন্তই হয়নি।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এলাকায় ভদ্র ছেলে হিসেবে পরিচিত মামুন। তবে তার মাধ্যমে অনেকেই চাকরি পেয়েছে। তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন ও ভাইয়ের স্ত্রী রিমা সুলতানা চাকরি করছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগে। এ ছাড়া ওই এলাকার আব্দুল গফুর সমবায় বিভাগে, তার ভাই গোলজার রহমান আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে, জয় কবির রিকো কৃষি বিভাগে, জাহিদ হাসান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে, সাইফুল ইসলাম কৃষি অফিসে কর্মরত। এই কজনসহ অনেককেই চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন মামুন। এরা সবাই শারীরিকভাবে সুস্থ হলেও তাদের অধিকাংশই চাকরি পেয়েছেন প্রতিবন্ধী কোটায়।
গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য নাসিম পাইকার বলেন, মামুন এলাকায় একজন ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত। চাকরি পাওয়ার পর সে কোনো জায়গাজমি কেনেনি। কোনো ঘরবাড়ি নির্মাণ করেনি, পিতার সেমিপাকা টিনশেড বাড়িতেই ছুটিতে এসে ওঠেন। তার বাবা বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিতে চাকর করেন।
নিয়ামুল হাসান ওরফে জেমসের বাড়ি ও তার শ্বশুরবাড়ি পাশাপাশি। তার বাড়ির পূর্বপাশে জমির মালিক মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে পলাশ। তাকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দিয়ে সেই জমি লিখে নিয়েছে জেমস ও তার শ্বশুবাড়ির লোকজন। জেমস চাকরি পাওয়ার পর এলাকায় অন্তত ১৩ বিঘা কৃষি জমি কিনেছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, নিজের বোন জেলিকে গণপূর্ত বিভাগে, স্ত্রী মৌসুমীকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)তে, শ্যালক সাঈদকে স্বাস্থ্য বিভাগের চাকরি দিয়েছেন। এ ছাড়া একই এলাকার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম স্বাস্থ্য বিভাগে, হযরত আলীকে বীজ প্রত্যয়ন অফিসে, উঞ্চুরখী গ্রামের ওয়াসিম ওরফে কালুকে কৃষি বিভাগে, সাইফুল নামের একজনকে হিসাবরক্ষণ অফিসে, ফারজানা বেগমকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন জেমস।
গাবতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বিপ্লব জানান, জেমস ও মামুন একই সিন্ডিকেটের সদস্য। তাদের যোগসাজসে সুস্থ মানুষকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে সনদপত্র জোগাড় করে দিত। সেই সনদ দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করে, লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তাদের কারণে এলাকার প্রকৃত যারা প্রতিবন্ধী তাদের চাকরি হয়নি। এ কারণেই গতবছর একটি অভিযোগ দুদকে দিয়ে তার অনুলিপি বিভিন্ন দপ্তরে দিয়েছিলাম, দুঃখের বিষয় সেটির কোনো তদন্ত হয়নি।
জেমসের মেঝ চাচা আব্দুল কুদ্দুস মণ্ডল বলেন, শুনেছি জেমস ও তার বউ দুজনই ঢাকায় সরকারি চাকরি করেন। তবে কে কোথায় চাকরি করেন তা আমি জানি না। পিতার রেখে যাওয়া অনেক সম্পত্তি আছে তার। অবৈধভাবে তার তো কোনো কিছু করার দরকার নেই।