Home Bangladesh সোমনাথের মিল থেকে ৩৫ কোটি টাকার চাল ধান লুট

সোমনাথের মিল থেকে ৩৫ কোটি টাকার চাল ধান লুট

90
0

চালকল মিলে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু হলে আমি ভয়ে পালিয়ে যাই। আমাদের হিসাব অনুযায়ী মিলে প্রায় ১৩ হাজার ৩০০ চালের বস্তা ছিল। ধানের বস্তা ছিল ১৭ হাজারের মতো। আমি যখন মিল থেকে পালিয়ে দূরের একটি বাজারে অবস্থান করি, তখন অনেককেই মোটরসাইকেলে করে চালের বস্তা নিতে দেখেছি।

সরকার পতনের পর ময়মনসিংহের গৌরীপুরের আরএমজি ইন্টারন্যাশনাল এগ্রো চালকলে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা এভাবেই বর্ণনা করেন চালকলের ব্যবস্থাপক গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিং।

৫ আগস্ট উপজেলার গৌরীপুরের তাঁতকুড়া এলাকায় আরএমজি ইন্টারন্যাশনাল এগ্রো চালকলে এ ঘটনা ঘটে। চালকল মালিক সোমনাথ সাহা গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

ব্যবস্থাপক গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিং বলেন, চালের বস্তাগুলোর মধ্যে ৮ হাজারের বেশি ছিল ৫০ কেজির। বাকিগুলো ছিল ২৫ কেজির। প্রতিটি ৮০ কেজির প্রায় ১৭ হাজার বস্তা ধান ছিল। এ ছাড়া ব্যাংক থেকে তোলা আনা ৫২ লাখ টাকা, ৩০টির বেশি মোটর, জেনারেটর ও বিদ্যুতের তার লুট করা হয়। সব মিলিয়ে অন্তত ৩৫ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চালকলের চারদিকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে আগুনে পোড়ার ক্ষতচিহ্ন। আশপাশ থেকে ভেসে আসছে পোড়া ধান ও চালের গন্ধ। চালকলের প্রবেশ পথেই পুড়ে যাওয়া ৫টি বাস ও একটি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত নিয়ে। চালকলের অফিস কক্ষগুলোতেও রয়েছে ভাঙচুরের ছাপ। রামগোপালপুর ইউনিয়নের একটি গোডাউন ও চালকলের সীমানার ভেতরে গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম ছিল; সেখান থেকেও লুটপাট হয়েছে মালামাল এমন দাবি সোমনাথ সাহার।

৫ আগস্ট সোমনাথ সাহার চালকলে লুটপাট শুরু হওয়ার পর ভয়ে পেছনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যান গৌরাঙ্গ চন্দ্র সিং। তিনি জানান, শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরই আশঙ্কা করা হচ্ছিল চালকলে লুটপাট হতে পারে। তখন শতাধিক শ্রমিক ও কর্মচারী বাড়ি চলে যান। পরে ভেতর থেকে মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দেয়াল টপকে ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করে দুর্বৃত্তরা।

ওই সময় পর্যন্ত একটি জায়গায় লুকিয়ে ছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্বৃত্তরা মূল ফটক খুলে দিলে আরও অনেকেই ভেতরে ঢুকে পড়লে ভয়ে পেছনের দেয়াল টপকে পালিয়ে যান তিনি।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, চালকলের ভেতরে ঢুকেই ৫টি বাস ও একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর শুরু হয় ধান ও চালের বস্তা লুট। খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকে পিকআপভ্যান, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে আসে অনেকেই। তারা যানবাহনে করে ধান ও চালের বস্তা নিয়ে যেতে থাকে। থানায় খবর পাঠিয়েও লাভ হয়নি। ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলেছে এই লুটপাট।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের নেতা ও গৌরীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোমনাথ সাহা বলেন, ‘হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় আমার সব মিলিয়ে ৩৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আমাকে এমন নিঃস্ব করে দেওয়া হয়েছে। আমার ব্যবসার পেছনে মোটা অঙ্কের ব্যাংকঋণ আছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে আমার ঘুরে দাঁড়ানো কষ্ট হয়ে যাবে। আমি আইনের আশ্রয় নেওয়ার প্রস্ততি নিচ্ছি।

গৌরীপুর থানার ওসি মো. হাসান আল মামুন বলেন, পুলিশের কর্মবিরতির কারণে থানার কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে এখন আমরা কাজে ফিরেছি। সোমনাথ সাহার পক্ষ থেকে এখনো পুলিশে অভিযোগ দেয়ার সুযোগ আছে। তবে তিনি এখন পর্যন্ত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here