সৌদি আরবের রিয়াদে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দূতাবাসের অডিটোরিয়ামে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক ও সৌদি অফিশিয়ালদের নিয়ে এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম (বার)। এতে বিশেষ অতিথি জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মোহাম্মদ আল জারকানি ও কূটনৈতিক কোরের ডীন জিবুতির রাষ্ট্রদূত দায়া আদদীন সাঈদ বামাখারামা বক্তব্য প্রদান করেন।
এ ছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টফি ফারনড, সৌদি আরবের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান বিষয়ক জাতীয় কমিশনের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল হানি মানসি এবং ওআইসির রাজনৈতিক বিষয়ক সহকারী মহাসচিব ইউসেফ আল দুবেহ বক্তব্য প্রদান করেন।
রাষ্ট্রদূত ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদদের আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে মাতৃভাষা বাংলা রক্ষা করার বিষয়ে বাঙালি জাতির অবদানের কথা বিদেশীদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন,দিবসটি পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষা রক্ষার দাবীতে সংগ্রাম ও ভাষার অধিকার আদায়ের এক উজ্জলতম দৃষ্টান্ত। তিনি ভাষা আন্দোলনে ও মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা বর্ননা করেন। এসময় রাষ্ট্রদূত বলেন, দ্রুতই পৃথিবী থেকে বিভিন্ন ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে, সাথে সাথে হারিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।তিনি বলেন- বাংলাদেশ সরকার মাতৃভাষা রক্ষার্থে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি মাতৃভাষা রক্ষায় দেশ কাল ভেদে পৃথিবীর সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে মাতৃভাষায় শিক্ষার ওপর জোর দেন। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর নিজ নিজ ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ এবং নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন বক্তারা। প্রত্যেককে নিজ নিজ ভাষা চর্চা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বজায় রাখতে বক্তারা আহবান করেন। এ ছাড়া ভাষার বৈচিত্র্য যেকোন দেশের জন্য গর্বের বিষয় বলে জানান বক্তারা। ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি-কে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতিতে অবদান রাখায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা। অনুষ্ঠানে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করে। এসময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে একটি তথ্যচিত্র ও ১২টি ভাষায় একুশে ফেব্রুয়ারির গান পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ১০ জন রাষ্ট্রদূতসহ ৪০ জন কূটনীতিক যোগদান করেন। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষ্যে দিনের শুরুতে দূতাবাস চত্বরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম(বার)। এরপর রাষ্ট্রদূত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিয়ে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া রিয়াদস্থ বাংলাদেশ কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
এই উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাষ্ট্রদূত প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহবান জানান। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন – নতুন প্রজন্মকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সাথে পরিচয় করে দেয়া ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী ও তার জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণে উৎসাহিত করতে প্রবাসীরা ভূমিকা রাখবেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও ভাষা আন্দোলন শিরোনামে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।