Home Uncategorized বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ধান ঘরে তুলতে মরিয়া কৃষকরা

বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ধান ঘরে তুলতে মরিয়া কৃষকরা

43
0

গোমতী নদী ও সালদা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়ে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে পাকা ও আধাপাকা আউশধান। তলিয়ে যাওয়া এসব ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

এরই মধ্যে বন্যায় এই উপজেলায় ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমির আউশধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি বিভাগ।

সোমবার (২৬ আগস্ট) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, সবগুলো ফসলি মাঠে পানি ঢুকে পড়েছে। বেশকিছু মাঠ বন্যার পানিতে পুরোপুরি তলিয়ে গেছে। কিছু মাঠে গলা পর্যন্ত উঠে এসেছে পানি। এসব মাঠের পাকা ও আধাপাকা আউশধান নষ্ট হয়ে গেছে। এসব মাঠে কৃষকরা আউশ ধানের পাশাপাশি খালি জমিগুলোতে সপ্তাহখানেক আগে আবাদ করেছিলেন রোপা আমন ধান। তৈরি করেছিলেন আমনের বীজতলা। সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে।

মাঠগুলোতে এখন বন্যার পানি থইথই করছে। দেখা গেছে কোনো কোনো কৃষক পরিবারের সদস্য ও শ্রমিক নিয়ে পানির নিচ থেকে পাকা ও আধাপাকা ধান সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ডুবন্ত মাঠ থেকে যতটা সম্ভব পাকা ও আধাপাকা আউশধান ঘরে তুলছেন।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের মহালক্ষীপাড়া এলাকার কৃষক মো. মোজাম্মেল কালবেলাকে জানান, আউশ মৌসুমে তিনি ৫৬ শতক জমিতে আউশ ধানের আবাদ করেছিলেন। সঠিক পরিচর্যা ও কৃষি অফিসের পরামর্শে ভালো ফলনও হয়েছিল। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ধান ঘরে তোলার উপযুক্ত হতো। তবে আকস্মিক বন্যায় এসব ধান তলিয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোমর পানি থেকে যতটা সম্ভব তলিয়ে যাওয়া এসব ধান সংগ্রহের চেষ্টা করছেন তিনি।

উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের বেজুরা এলাকার কৃষক আবুল হোসেন কালবেলাকে বলেন, এ বছর আমি ১২০ শতক জমিতে আউশ আবাদ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছিল। তবে হঠাৎ করে আসা বন্যায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। তবু নিজেরা ও শ্রমিক নিয়ে যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি ধান সংগ্রহের।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের ডগ্রাপাড়া এলাকার কৃষক ইমরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, হঠাৎ করে এভাবে বন্যার পানি এসে পাকাধান তলিয়ে ফেলবে কোনোদিন কল্পনাও করিনি। পানির নিচ থেকে কিছু জমির ধান সংগ্রহ করেছি। অধিকাংশ জমির ধানই পানির তীব্র স্রোতে নষ্ট হয়ে গেছে। তাও যতটা সম্ভব ধান সংগ্রহের চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, অপ্রত্যাশিত এই আকস্মিক বন্যা মোকাবেলায় কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। বন্যার পানি নেমে গেলে পুরোপুরি ক্ষতি নির্ধারণ করা যাবে। পানি বাড়লে বা বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। এখনকার হিসেবে এ উপজেলায় ৩ হাজার ৮৬৮ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের মাঠপর্যায়ের সব কৃষি কর্মকর্তারা এই মুহূর্তে কৃষকদের সঙ্গে রয়েছেন। তবে অনেক কৃষক পানির নিচ থেকে পাকা ও আধাপাকা ধান সংগ্রহের আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এসব ধান সংগ্রহে কৃষকদের আমরা সবরকমের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমনের বীজতলা বিনষ্ট হওয়ায় আমরা কিছু পদক্ষেপ হাতে নিচ্ছি। পুনরায় বীজতলার জন্য কৃষক পর্যায়ে আমনের কী পরিমাণ বীজ সংগ্রহে আছে সে রিপোর্টের ভিত্তিতে কী পরিমাণ বীজ প্রয়োজন তার চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে পুনরায় বীজতলা স্থাপনের জন্য কী পরিমাণ উঁচু জায়গা আছে সেটা আমরা নির্ধারণ করে রেখেছি। এই পরিস্থিতিতে বি আর-২২ ও বি আর-২৩ এই জাতগুলো উপযোগী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here